বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে হামলা,দুইজন বিত্রনপির নেতা
রয়েছেন দেশের বাইরে, তবুও দুইজনই মামলার আসামী। বিষয়টি হাস্যকর ও মুখরোচক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফরিদপুরে বিএনপি’র সমাবেশে হামলার ঘটনায় বিএনপির ৩১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরো ৪০-৫০ জনকে।
এদিকে সমাবেশে হামলার সময় আটক হওয়া বিএনপির ৬ কর্মী এবং পরে আটক করা ১০ জনসহ মোট ১৬ জনকে আসামি হিসেবে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বুধবার (৩০ নভেম্বর) দিবাগত রাতে মামলাটি দায়ের করেন কোতোয়ালি থানার এস আই মাহাবুল করিম।
বিএনপির ৩১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মধ্যে বর্তমানে দুই জন দেশের বাইরে রয়েছেন। বিদেশে থাকলেও ওই মামলায় তাদের আসামী করা হয়েছে।
দেশের বাইরে রয়েছেন মো. সেলিম হোসেন (৪৫)। যিনি ভিপি সেলিম নামে পরিচিত। সেলিম ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) ও জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। তাকে মামলার ১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
দেশের বাইরে থাকায় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে গণমাধ্যমের সাথে কথা হয় মো: সেলিম হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, গত ২১ তারিখ ফরিদপুর থেকে রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে। এরপর ২৩ তারিখ ঢাকা থেকে এয়ারে ভারতের ব্যাঙ্গালরে পৌঁছি। বর্তমানে ব্যাঙ্গালরে রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমার নিজের এবং আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্গালরে এসেছি। আমার ছেলের হার্ডের সমস্যা, ডা. দেবী শেঠীর তত্বাবধায়নের নারায়না হেলথে চিকিৎসা চলছে। আমার চিকিৎসা চলছে সেন্ট জন্স মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে। আসতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।
আরেকজন গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন (৪৮)। গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া শহরের টেপাখোলা মহল্লার বাসিন্দা ও ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে করা হয়েছে মামলার ২১ নম্বর আসামি।
ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন জানান, তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে রয়েছেন। সেখানে ২ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোটারী ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতে সেখানে অবস্থান করছেন।
তিনি আরো জানান, গত ২৯ নভেম্বর প্রোগ্রামে যোগ দিতে ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। পরে ঢাকা থেকে এখানে আসি।
মামলার বাদী ফরিদপুর কোতয়ালী থানার এস আই মাহাবুল করিম বলেন, হামলার সময় তিনি ওই দুজনকে দেখেছেন বলে মনে হয়েছে। তবে এটা ভুলও হতে পারে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন বলেন, মিছিল-মিটিংয়ে হামলার সময় অনেকেই সেখানে ছিল। এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে, তদন্তে এধরনের কোনো বিষয় পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ ছিলো। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের হামলায় ও পুলিশের গুলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হতাহত হওয়া ও গায়েবী মামলার প্রতিবাদে তারা এই সমাবেশ ডেকেছিলো ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে।
বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ৪টার মধ্যে সেখানে জড়ো হওয়া শতাধীক কর্মীর সামনেই মঞ্চে উপস্থিত বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল ছুড়ে ও ঘটনাস্থলে পরপর তিনটি ককটেল ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। এতে কমপক্ষে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ( ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদের দাবি।
পুলিশের দাবী, বিএনপির দুই গ্রুপ মারামারি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় তারা এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। এসময় তাদের ইটের আঘাতে ৫ পুলিশ আহত হয়েছেন বলে দাবী করে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩০ নভেম্বর বেলা সোয়া ৩টার দিকে চৌধুরী নায়েবা ইউসুফ সমর্থিত মহানগর বিএনপির আহবায়ক এফ এম কাইয়ুমের সভাপতিত্বে কর্মসূচী শুরু করে বিএনপি। পৌনে চার টার দিকে শামা ওবায়েদ সমর্থিত জুলফিকার হোসেন জুয়েলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন জাতীয়তাবাদী দলের স্লোগান দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এলে এফ এম কাইয়ুম ও সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছার নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। জনসাধারণের জীবনযাত্রা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ সদস্যরা শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
পুলিশের করা মামলায় বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেছ আলী ইছা (৫৮), সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া (৫০), মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এফ এম কাইয়ুম জঙ্গি (৬০), সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ (৫৪), যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান (৪০), জুলফিকার হোসেন (৫৫), খন্দকার ফজলুল হক (৬০), মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন (৪৮), গোলাম রব্বানী (৪৮), মহানগর যুবদল সভাপতি বেনজীর আহম্মেদ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. তানজিমুল হাসান (৩১), মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ (৪৮), জেলা যুবদলের সভাপতি রাজীব হোসেন (৪৫) প্রমূখ।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত কথাটা সঠিক নয়। নিজেদের মধ্যে আমাদের কোনো কোন্দল নেই। বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কেন্দ্রিয় মহিলা দলের যুগ্ম-সম্পাদক নায়েবা ইউসুফের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল ছুড়ে ও ককটেল ফাটিয়ে বিএনপির সমাবেশ পন্ড করে দেয়। আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়েছে। আবার আমাদের নেতাকর্মীদের নামেই মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, বিএনপির সমাবেশ মঞ্চে হামলার ঘটনায় তাদের দলের আভ্যন্তরিন কোন্দলই দায়ী। তারা শামা ওবায়েদ ও নায়েবা ইউসুফ এই দুই দলে বিভক্ত। এই হামলা সেই বিভক্তির কারনেই ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এস আই মাহাবুল করিম বাদি হয়ে বিএনপির ৩১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৪০-৫০ আসামী রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।