বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ আজ ৩ ডিসেম্বর। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে এ সমাবেশ হবে। এখানে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশের একদিন আগেই জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে রাজশাহী। বিভাগজুড়ে নানারকম বাধা, গায়েবী মামলা হামলা ভয়ভীতি গ্রেফতার তারপর তিনদিন আগ থেকেই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট আর বিভিন্ন পয়েন্টে চৌকি বসিয়ে চলছে পুলিশের তল্লাসী। এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে রাজশাহী আসছে হাজার হাজার মানুষ। ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে রিক্সা ভ্যান মটরসাইকেল ট্রেন আর পুলিশী ঝামেলা এড়াতে রাজপথ পরিহার করে ভিন্ন পথে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসছেন। সর্বত্র পুলিশী বাধার মুখে পড়ছে। রাজশাহী রেলস্টেশন গেটেও তল্লাশী চালানো হচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষনার কারনে ৩০ নভেম্বর রাতে বাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকলেও পথে পথে বাধা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আটক করা হয় বাস। অনেকে বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠের দিকে আসেন। বগুড়া থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এসেছেন বুধবার রাতে। পাবনার অনেক গাড়ি আটকে দেয়া হয়েছে বলে আগত নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। পরিবহন ধর্মঘট চলছে তারপরও লোকসমাগম বাড়ছে। মাদরাসা মাঠের পাশ্ববর্তী ঈদগাহ ময়দানে লোকে লোকারন্য। এখানে তাবু টানিয়ে খড় বিছিয়ে চাদর পেতে অবস্থান। জেলা জেলার ব্যানার দিয়ে চিহিৃত করা হয়েছে। সামনে চলছে রান্না বান্না সাথে আনা চাল ডাল তেল মশল্লা আছে চিড়া মুড়ি গুড়। মাঠে রাত কাটানো কিংবা খাওয়া দিয়ে নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। সকাল থেকে অনেক রাত অবধি শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকা। মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শফিকুল হক মিলন, হাবিবুর রহমান হাবিব,ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফাসহ নেতারা ঘুরে ঘুরে খোজ খবর নিচ্ছেন। তাদের সাথে বসে কিছুক্ষন সময় কাটাচ্ছেন। বড় বড় নেতাদের কাছে পেয়ে উজ্জীবীত হচ্ছে আগতরা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সমাবেশ প্রমান করে দেবে রাজশাহী অঞ্চল বিএনপির দূর্গ।
রাজশাহীর মানুষ বরাবর অতিথি পরায়ন। এবারো দেখা গেল তার প্রতিফলন। নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে খাবার নিয়ে আসছেন। রাজশাহী বিএনপির আপ্যায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য শফিক রাতের খাবার বিতরন করছিলেন। সাথে ছিলেন মতিউর রহমান মন্টুসহ কজন নেতা। ডেকে ডেকে খাবার দিচ্ছেন। শফিক জানান তারা কুড়ি হাজার লোকের খাবার ব্যবস্থা করেছেন। রান্না বান্না করার জন্য কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা হয়েছিল। হঠাৎ করে তা বাতিল করে দিয়েছে। পদ্ম গার্ডেনের পাশে রাত দশটায় দেখা যায় বড় বড় হাড়িতে রান্না বান্না চলছে। বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফাকে পুরানো এক মামলায় হঠাৎ করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি পাশেই। সেখানে থেকে প্যাকেট খাবার দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে রান্না করে ভ্যানে ডেকচি নিয়ে চলে আসছে সমাবেশ স্থলের কাছে। পানি সরবরাহ ভাল। কারো কোন অভিযোগ নেই। বয়স্ক ও যাদের প্রয়োজন তাদের মাঝে কম্বল ও চাদরও দেয়া হচ্ছে। মহিলা দলের কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন মহিলা দলের নেতাকর্মীদের বাসায়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান থাকা খাওয়া কোন ব্যাপার না। দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা একত্রিত হওয়ায় অন্যরকম আমেজ বিরাজ করছে। এক সাথে থাকা খাওয়া শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করা। তাদের ভাষায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন এ লড়াই দেশ বাঁচানোর লড়াই, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই। এ লড়াই আমাদের জিততে হবে। এর বিকল্প নেই। যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এর মধ্যদিয়ে স্বৈরশাসনের পতন ঘটানো হবে।
গণসমাবেশ হবে ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে। জেলা প্রশাসন আগেভাগে অনুমতি দিলেও পুলিশ অনুমতি দিতে বিলম্ব করার পর এখনো (শুক্রবার দুপুর) মাঠে যেতে পারেনি নেতাকর্মীরা। প্রবেশ পথগুলোয় পুলিশী প্রহরা। দুপুরে মাঠে আসেন সমাবেশের সমন্বয়ক এ্যাড: রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ নেতৃবৃন্দ। মঞ্চ তৈরীর কাজ প্রত্যক্ষ করেন। এখনো অনেক কাজ বাকী। অন্যান্যস্থানের মত আগে ভাগে যাতে নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে না পারে এবং গণসমাবেশ শুরুর আগের দিনই যেন সমাবেশ হতে না পারে এমনি কৌশলী পরিকল্পনা পুলিশ নিয়েছে বলে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন। আমাদের ইচ্ছে ছিল জুম্মার নামাজ মাদরাসা ময়দানে পড়ার তা হলোনা। হযরত শাহমখদুম (রূ:) দরগা মসজিদসহ আশেপাশের সব মসজিদে ছিল ঠাই নেই অবস্থা। অবশেষে ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেলের পাশেই জুম্মার নামাজ আদায় করেন মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শফিকুল হক মিলন, ওয়ালিউল হক রানাসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুর পর্যন্ত হাজার ষাটেক মানুষ থাকলেও বিকেল থেকে চেহারা বদলে যায় দলে দলে নেতাকর্মী আসতে থাকে। মাদরাসা মাঠের আশপাশ লোকে লোকারন্য হয়ে ওঠে। রং বেরংয়ের টুপি ,টি-শার্ট পরে জেলাগুলোর মিছিল করতে থাকে। সবচেয়ে চমকদেয় বগুড়া জেলা। প্রায় হাজার তিনেক মটরসাইকেলের বহর বগুড়া থেকে শ্লোগান দিতে দিতে রাজশাহী আসে। রাস্তার দুধারের মানুষ তাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়। সাহেব বাজার, দরগাপাড়া, পাঠানপাড়া হয়ে মাদরাসা ময়দানে দিকে যাবার সময় মহিলারা পর্যন্ত হাত নেড়ে তাদের স্বাগত জানাতে দেখা যায়। বগুড়া বিএনপির সভাপতি ও মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, মটরসাইকেলে পাঁচ ছয় হাজার কর্মী এসেছে। এর আগে দুদিন আগে আরো কয়েক হাজার কর্মী রাজশাহী এসেছে।
সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়েছে। চারিদিকে এক আওয়াজ হটাও স্বৈরাচার বাঁচাও দেশ। খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় দিতে হবে। সন্ধ্যায় মাদ্রাসা মাঠ এলাকা ঘুরে দেখা যায় ইতোমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হয়েছে। আজ সারা রাত মানুষ আসবে। আবার স্থানীয় ও আশেপাশ্বেও উপজেলা থেকে মানুষ গণসমাবেশে যোগ দেবে। ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে সমাবেশে কত লোক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।