Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় ফসলের মাঠে বেড়ে উঠছে ইটভাটা

প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

 কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ইটভাটা। অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এসব ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হয় কাঠ। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় পরিবেশ ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব এনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চালানো হচ্ছে ইটের ভাটা। ইটভাটা থেকে আড়াইশ কোটি টাকার বার্ষিক বাণিজ্য হয়। প্রায় ২৮টি ইটভাটা নষ্ট করেছে অন্তত ২০টি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকিসব চলে গাছ পুড়িয়ে, কাটা হয় ফসলী মাটি। কোনো কোনো উদ্যোক্তা কয়লার ভাটা বন্ধ রেখে লাগামহীন ভাবে গাছ পুড়িয়ে চালাচ্ছে। ইটের ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ কাটার কল।
এসব ইটভাটায় স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও মানুষ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলার স্বরুপপুর-বাজুডাঙ্গা এলাকায় ৩টি ইটের ভাটায় সরেজমিনে কাঠ পুড়তে দেখা যায়। মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ। এসব ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের ক্ষেতেই। উপজেলার শাদীপুর ফসলের মাঠও এখন ইটভাটার দখলে। এই এলাকায় পাঁচটি ইটের ভাটা। যারমধ্যে একটিতে কয়লার জ্বালানি আয়োজন থাকলেও তা অব্যবহৃত। ওই ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ ফাঁড়ার মেশিন। এখানে কমবেশি সব ভাটাতেই স’মিল বসিয়ে গাছ কেটে জ্বালানির চাহিদা মেটানো হয়।
আল সালেহ লাইফ লাইন ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, আমার দুটি ভাটা একটি কয়লায় চলে আরেকটি খড়িতে।
বিশ্বাস ব্রিকসের পরিচালক আনোয়ারুল জানান, মালিকদের ঐক্য নাই, যে যার মতো ছন্নছাড়া হয়ে ব্যবসা করছে। ইতিবাচকভাবে পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো অভিভাবক নেই, যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ডাংমড়কা এলাকার তিনটি ফসলের মাঠে ইটভাটা চারটি। ইট পোড়াতে সবাই নির্ভরশীল ফসলের ক্ষেতের মাটি এবং কাটা গাছের ওপর।
চলতি মাসেও দাড়ের পাড়া, গোবর গাড়া, নারায়নপুর, বড়গাংদিয়া এলাকায় ফসলের ক্ষেতের মাটি কাটা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে।
সংগৃহীত তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার এই দৌলতপুর উপজেলায় ইট পোড়ানোর একেক মৌসুমেই কাটা গাছের প্রয়োজন হয় ১ লাখ টন, যার চলতি বাজার মূল্য অন্তত ৪০ কোটি টাকা।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এসব ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, আমি দায়িত্বে আসার আগেই। তখন কিভাবে হয়েছে বলতে পারবো না। সমস্যাটি সমাধানে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া এজমাসহ ফুসফুসের নানা জটিলতা তৈরি করে। দৌলতপুরে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, দৌলতপুরে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়া ইটভাটা একটি, বাকি ২৮টি অবৈধ। সবাইকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ