Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়ক আবারো অন্য পথে চলার নির্দেশনা

আগেরবার যেহেতু কোনো সমস্যা হয়নি এবারও হবে না : সফিকুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হঠাৎ করেই ঘোষণা আসে অন্য পথে চলুন। কিন্তু এমন ঘোষণা আসলেই রাজধানীসহ বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে চলাচলকারী লোকজনের শুরু হয় ভোগান্তি। এ ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এবারও সেই ঘোষণার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। বিমানে যাতায়াত করা ও বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাফেরা করা মানুষকে আবারও অন্য পথ দেখার পরামর্শ দিয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলাচল করা মানুষ কোন পথে চলাচল করবে তার সঠিক দিক নির্দেশনা নেই। ফলে এ পথে চলাচল করা এবং বিমানে আসা যাওয়া করা মানুষের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা আজ রাত ৮টা থেকে পরবর্তী ৫২ ঘণ্টা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। বিআরটি প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনের সড়কে উন্নয়নকাজ চলবে বিধায় এই নির্দেশনা দিয়েছে সওজ।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে ৩ ডিসেম্বর শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অতি প্রয়োজন ছাড়া সড়কের ওই অংশ দিয়ে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিআরটির প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে মহাখালীমুখী চারটি লেনের মধ্যে দুটি লেনে উন্নয়নকাজ চলবে বিধায় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য উল্লেখিত সময়ে অতি প্রয়োজনীয় ভ্রমণ ছাড়া ওই সড়ক ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে ছুটির দিনের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে না। একটা অংশ বন্ধ রেখে প্রকল্পের কাজ চলবে। বাকী অংশ খোলা থাকবে। যাদের প্রয়োজন সেসব গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এই সড়কে সাধারণত গাড়ির চাপ বেশি থাকে তবুও আগেরবার যেহেতু কোন সমস্যা হয়নি আশা করি এবারও কোন সমস্যা হবে না।

জানা যায়, রাজধানীতে প্রবেশমুখ এবং অত্যন্ত ব্যস্ত সড়কটি চলাচলকারী মানুষের জন্য নিদারুণ দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এর আগে একই কারণে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত সড়কটি এড়িয়ে চলার নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনা দেয়ার পর ব্যস্ত সড়কটির উপর দিয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ করা হয় কচ্ছপ গতিতে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মূল সড়ক যেন বিধ্বস্ত কোনো গিরিখাদ। যত্রতত্র খানাখন্দ, রাস্তার মাঝখানে নির্মাণ সমগ্রীর স্তূপ, খানাখন্দে পানি জমানো, উঁচুনিচু সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে যাদের ওই সড়কটি ব্যবহার করতে হয় তারা ভোগান্তির ঝুঁকি বুঝেই রাস্তায় নামেন। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর মানুষ এ পথেই যাতায়াত করেন। এমনকি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা এলাকার মানুষ এ পথ ব্যবহার করে থাকেন। এ অবর্ণনীয় ভোগান্তির কারণে এই প্রকল্পটিকে সাধারণ মানুষ মহাদুর্ভোগের প্রকল্প হিসেবে নামকরণ করেছে। অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় শিক্ষার্থী চলাচল করেন। অরক্ষিত এই প্রকল্পে গার্ডার পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় উত্তরা এলাকার বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সড়কে চলাচলরত জনসাধারণ ও পরিবহনকে সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সে সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিমানে বিদেশ যাতায়াত করছেন, লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়া করছেন সে সড়ক ৫২ ঘণ্টা রাখা কতটুকু দায়িত্বশীলতা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ভোগান্তির প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। প্রতিদিন এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে দৈনিক যাতায়াত করে লাখো মানুষ। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই তীব্র যানজট লেগে থাকে এখানে। এই সড়কেই সৃষ্টি হয়েছে যানজটের রেকর্ড। যানজটের কারণে এই সড়ক ব্যবহাকারী বিদেশ গমনের যাত্রীদের ফ্লাইট মিস হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কোন যাত্রীকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো দূরহ ব্যাপার হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় গণপরিবহনগুলোতে। ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বছরের পর বছর একই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই। দীর্ঘ প্রকল্পের সড়কের দু’পাশে বড় বড় স্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা প্রায় অচল অথবা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল, আবাসন, ফ্ল্যাট বাড়ি, গলি, প্রায় নিত্যদিন লেগে থাকে তীব্র যানজট। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও বন্ধের তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা। খানাখন্দে বৃষ্টি ও বর্ষায় পানি জমে গেলে জনদুর্ভোগ হয় অবর্ণনীয়। নির্মাণ কাজে গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার জন্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু।

এবিষয়ে উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রফিক বিভাগ, উত্তরা জোন) নাবিদ কামাল শৈবাল ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর সড়কের পুরো রাস্তা বন্ধ হচ্ছে না। তবে রাস্তার লেন বন্ধ রাখার কারণে গাড়ির গতি অনেকটা কমে যেতে পারে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানজট অনেকটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ