Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কাশিয়ানীমুক্ত দিবস আজ

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : আজ ১৯ ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে পাক বাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ষ্টেশনের ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হলেও  কশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ওড়ে ১৯ ডিসেম্বর সকালে। শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনতার সমাবেশ ও বঙ্গবন্ধু চত্বরের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উৎযাপন করবে কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এ অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহমন্ত্রী শাহজাহান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন কাশিয়ানী উপজেলার রাতৈল ক্যাম্পের কামান্ডার সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ জানান, গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-নড়াইল জেলার সীমান্তে অবস্থিত এবং ভৌগোলিক ও যুদ্ধের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন ও নদী বন্দর ভাটিয়াপাড়া দখল নিয়ে পাক হানাদার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই হয় কয়েক দফা। পাক বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া মিনি ক্যান্টনমেন্টটি গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও ফরিদপুর-নড়াইল-গোপালগঞ্জ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য বস্তু ছিলো ভাটিয়াপাড়ার ওই মিনি ক্যান্টনমেন্টটি। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ৭১ সালের মে মাসে এখানে ওই অয়্যারলেস স্টেশনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। দীর্ঘ ৭ মাস ব্যাপী ৬৫ পাক সেনার শক্তিশালী একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকার নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্যতন, নিপীড়ন ও গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাকরে পাক বাহিনী লাশ ভাটিয়াড়ার দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদীতে ভাসিয়ে দিতো। পাক বাহিনীর একটি দল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুরপাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্টন থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে গিয়ে ভাটিয়াপাড়ার ওই ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। ভাটিয়াপাড়ার পাক বাহিনীর মিনি ক্যান্টনমেন্টটি দখলে নিয়ে ৬ নভেম্বর দু’টি মারাত্মক যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে  টানা ১৫ ঘন্টা পাক বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘায়েল করতে পাক বাহিনী আকাশ পথে বিমান থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু সেদিন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেনি। এ যুদ্ধে পাক বাহিনী যথেষ্ট ঘায়েল হয়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা মীর মহিউল হক মিন্টু, সাধুহাটির এ কিউএম জয়নুল অবেদীন শহীদ হন। ওই অয়্যারলেস ক্যাম্প দখল নিয়ে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধ হয় ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিনে। ৩ দিন যুদ্ধের পর ১৯ ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল  গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়া ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে ৬৫ জন পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে ৬ পাক সেনা নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান সিকদার, অনিল কুমার বিশ্বাস, মজিবর রহমান, মোহাম্মদ হান্নান শেখ  নিহত হয়। এর পর ভাটিয়াপাড়ার ওয়্যারলেস স্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টে উড়ানো হয় বাংলা দেশের মানচিত্র  ও লাল সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ জমিনের বিজয় পতাকা। হানাদার মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াসহ সমগ্র গোপালগঞ্জ অঞ্চল। মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ এ বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে অনন্দ উলাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনায়েত হোসেন বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে কাশিয়ানী মুক্তদিবস উদযাপন করা হবে। নৌ পরিবহমন্ত্রী শাহজাহান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কাশিয়ানী মুক্ত দিবসে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়া দিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনতার সমাবেশ বক্তৃতা করবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু চত্বরের উদ্বোধন করবেন। এ অনুষ্ঠানের আওয়ামী লীগের  প্রেসিডিয়াম সদস্য লেঃ কর্নেল (অবঃ) মুহাম্মদ ফারুক খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ