Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতের আমেজে কুমিল্লা নগরীতে পিঠাপুলি বিক্রির উৎসব

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : সন্ধ্যার হিমেল হাওয়ায় পিঠার স্বাদ নিতে কুমিল্লা নগরীর ফুটপাতে বা মোড়ে মোড়ে বসা পিঠা বিক্রির দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে লোকজনের। নানারকম পিঠার জুড়িদারি স্বাদ নিতে ভুল করছেন না ব্যস্ত নগরীর নানা পেশার মানুষজন। শীতের আমেজে ফুটপাতের পিঠাপুলির দোকানগুলোতে সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি চলছে পিঠা বেচাবিক্রির উৎসব। ব্যস্ত সময়ের ঘড়ির কাঁটায় আটকে পড়া নাগরিক জীবন থেকে যেখানে দিন দিন কমে যাচ্ছে পিঠাপুলির আয়োজন সেখানে শীত এলে এই আয়োজন ফুটপাতে টিকিয়ে রেখেছেন নি¤œ আয়ের মানুষরা। যারা ছোট্ট দোকান খুলে নগরবাসীকে স্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন শীতের পিঠার। শীতে পিঠা খাওয়া বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ। গরম ভাঁপা পিঠায় ফু দিয়ে মুখে তুলে নেয়ার মজাটাই আলাদা। কুমিল্লার গ্রাম-গঞ্জে শীতের পিঠা মুখে নিয়েই সকাল শুরু হয় ওইসব জনপদের মানুষদের। কিন্তু কুমিল্লার নগর জীবনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নাগরিক ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঘরে বানানো পিঠা অনেকেরই মুখে উঠে না। তাই তো নগরীর মোড়ে মোড়ে শীত মৌসুম ঘিরে পিঠা বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানই অনেকের ভরসা। শীতের সব পিঠা নগরীর রাস্তায় মিলবে না। তবে যা মিলে তা খেতে খেতে আড্ডা মারাটাও যথেষ্ট। নতুন চালের গুঁড়া, নারকেল, গুড়ের মিশ্রণে তৈরি ভাঁপা পিঠা অনেকেরই পছন্দ। আবার সিদল ভর্তা বা সরষে বাটা দিয়ে খোলাপিঠা খাওয়ার দৃশ্যেও দেখা যায় নগরীর ফুটপাতের পিঠার দোকানগুলোতে। প্রতি বছর শীত এলেই কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা, কাশারিপট্টি, চকবাজার, গোয়ালপট্টি, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, কান্দিরপাড়, নজরুল এভিনিউ, বাদুরতলা, পুলিশলাইন, বাগিচাগাঁও, রামঘাট, টমছমব্রিজ, পদুয়ার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে শীতের কয়েক রকমের পিঠা তৈরি ও বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে সন্ধ্যা নামলেই ভিড় বাড়ে পিঠাপ্রেমিদের। মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যেই মিলছে ফুটপাতের পিঠা। সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি নগরীর ওইসব স্থানে জমে উঠে পিঠা খাওয়ার আসর। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পিঠা কিনে নিয়েও যান। নগরীর ফুটপাতে বসা ভ্রাম্যমাণ মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা জানান, ভাঁপা পিঠার বিক্রি ও কদর বেশি। তবে খোলাপিঠাও অনেক বিক্রি হয়। বিকেল থেকে দোকান খুলে বসলেও বিক্রি জমে উঠে সন্ধ্যা থেকে। চলে রাত ১০টা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত। নগরীতে পিঠা তৈরি ও বিক্রির সাথে যুক্তরা মূলত নি¤œ আয়ের মানুষ। প্রতিদিন যা বেচাবিক্রি হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসারের চাকা। কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীতের আগমনে নবান্নের পিঠা হিসেবে নতুন চাল ও নতুন গুড়ের তৈরি এই পিঠা ফুটপাত থেকে খাওয়ার আনন্দটাই ভিন্নমাত্রার। এই শীতে পিঠা খাওয়ার মধ্যদিয়ে যে আনন্দ উপভোগ করা যায় তা অন্য ঋতুতে সম্ভব নয়। কুমিল্লা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও বর্তমানে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, শীত শুরুর সাথে সাথেই পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়াটা বাঙালির ঐতিহ্য। সময়ের ব্যবধানে যান্ত্রিক সভ্যতার এ সময়ে শীত এলে শহুরে জীবনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজনের সকাল-সন্ধ্যা অনেকটা মরে গেছে। দিন দিন এই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। আমাদেরকেই এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে, টিকিয়ে রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ