রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গ্রামীণ জনপদ থেকে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি ও দৃষ্টিনন্দন তার শৈল্পিক বাসা। যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ জনপদে বাবুই পাখি তার শৈল্পিক নিদর্শন দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছে। আবাল-বৃদ্ধরা বাবুই পাখি ও তার বাসা দূর বা কাছ থেকে সবাই তাকিয়ে দেখেছে। সবাই বলে উঠেছে চমৎকার তাদের কারিগরি নিদর্শন। গ্রাম-বাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির সেই শৈল্পিক বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আজ আমরা হারাতে বসেছি সেই কারিগর পাখি ও তার শিল্পকর্মকে। এ কারিগরদের রক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম হয়তো বাস্তবে দেখতে পাবে না এই কারিগর পাখি ও তার শিল্পকর্মকে। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন রক্ষা করা জন্য দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সচেতনমহল মনে করেন। জানা গেছে, দামুড়হুদার গ্রামীণ জনপদে ১৫-২০ বছর আগেও তাল, নারকেল ও খেজুর গাছে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধুমাত্র শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত। উৎসাহ যোগাত মানুষকে পরিশ্রমী হতে। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। দমকা হাওয়া ও প্রবল ঝড়েও টিকে থাকতো তাদের বাসা। তাল নারকেল গাছ ছাড়াও খড়, ধানের বিচলি, তালের কচিপাতা, ঝাউ, ঘাস, আখের পাতা ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু বাবলা, সুপারি গাছেও চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা। এসব পাখিরা একান্নবর্তী পরিবারের মতো এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এরা বাস শুরু করত। বাবুই পাখি একাধারে স্থপতি, শিল্পী এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। বাবুই পাখির বাসার বুনন এত শক্ত যে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। পুরুষ বাবুইরা নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে গাছের ডালে ডালে নেচে নেচে বেড়ায় আর বিভিন্ন সুরে ডাকাডাকি শুরু করে। এরপর উঁচু তালগাছের পাতার ডগায় বাসা তৈরির কাজ শুরু করে পুরুষ বাবুই। বাসার অধের্ক কাজ শেষে হলে পুরুষ বাবুই স্ত্রী বাবুইকে ডেকে দেখায়। সেটা যদি স্ত্রী বাবুই পছন্দ করে তাহলে বাসার কাজ সম্পূর্ণ করে পুরুষ বাবুই। বাবুই সাধারণত দুই ধরনের বাসা তৈরি করে থাকে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শৈল্পিকভাবে এসব বাসা তৈরি করে। একটা বাসা তৈরিতে ১০/১২ দিন সময় লাগে। সঙ্গীর সাথে থেকে পুরুষ বাবুই কেবল বাসা তৈরি করে। আবার যখন স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই নতুন আরেক সঙ্গীকে খুঁজতে থাকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। ঘর-সংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সঙ্গে তাতে স্ত্রী বাবুইদের বাধা নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম হলো পাকা ধানের মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখির প্রধান খাদ্যতালিকায় আছে ধান, চাল, গম, পোকা-মাকড় প্রভৃতি। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে আনন্দিত করত। মাঠের রাখালরা ঢিল ছুঁড়ে মারতে গাছে বাসা পাড়ার জন্য। ঢিল বাসায় লাগলেও সহজে ছিঁড়ত না। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে, বাড়ি পাশে ও পুকুর পাড়ে সেই তালগাছে বাবুই পাখির বাসার দেখা মেলে না। গ্রাম-বাংলায় এখন আর আগের মতো মাঠে-ঘাটে বাবুই পাখির সেই বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তন ও প্রকৃতির বিপর্যয়ের কারণে আজ আমরা হারাতে বসেছি সেই কারিগর পাখি ও তার শিল্পকর্মকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।