Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনজিওগুলো দাদন ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে

হাইকোর্টের মন্তব্য চেক ডিজঅনারের মামলা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

মাইক্রো ক্রেডিট পরিচালনাকারী বিভিন্ন এনজিও’র দায়েরকৃত সব চেক ডিজঅনার মামলা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে কোনো এনজিও যদি তা আদায়ে চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে সেটি সরাসরি খারিজ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মো: আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন গতকাল সোমবার এ তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, আদালত বলেছেন, এনজিওগুলো দাদন ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করছে। তারা গরিবের উন্নয়নের নামে জীবন বিধ্বংসী কার্যক্রম করছে। গরিব-দুঃখী মানুষকে জেলে ভরছে। এটা হতে পারে না।
হাইকোর্ট ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম মনিটরিং করতে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত আদেশে বলেন, এখন থেকে কোনো এনজিও চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। এছাড়া ভবিষ্যতে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে কোনো এনজিও যদি তা আদায়ে চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে তা সরাসরি খারিজ করে দিতে হবে।
ক্ষুদ্র ঋণগ্রহিতা ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের দায়েরকৃত চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বাতিল করে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এনজিওগুলো বেআইনিভাবে ঋণ আদায়ের জন্য চেক ডিজঅনার মামলা করে আসছে। ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ের জন্য তাদের কোনো আইনও নেই। তারা একমাত্র দেওয়ানি আদালতে অর্থ আদায়ের জন্য মোকদ্দমা করতে পারে।
শুনানিতে ইলিয়াস আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান বাসুনিয়া, ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিসান মাহমুদ এবং সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন অংশ নেন।
এর আগে ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছিলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো। আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক নেয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজটি করে আসছে।
আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু; কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংকে তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওকুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে নয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ