প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কিংবা ইউটিউবে শুধুমাত্র ভিউ বাড়ানোর জন্য একশ্রেণীর নির্মাতা নাটক বা অন্য কোনো কন্টেন্টের এমনসব অদ্ভুত, অশ্লীল, চটকদার ও কুরুচিপূর্ণ নাম ব্যবহার করছে, যা আমাদের দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে বিশ্বে অত্যন্ত অমর্যাদাকর হিসেবে তুলে ধরছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের শুরু থেকেই অনেকে ভালো গল্পের সুন্দর নাম না দিয়ে নাটক বা কন্টেন্ট বানানোর দিকে ঝুঁকেছে। এর অর্থ হচ্ছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মটিকে সুকাজে ব্যবহারের পরিবর্তে কুকাজে ব্যবহারের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। এসব দেখার কেউ নেই। ফলে ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় একশ্রেণীর নির্মাতা কুপথে পা বাড়িয়েছে। অথচ একটা সময় ভালো গল্পের নাটকের সুন্দর নাম দর্শকের মনে দাগ কাটত। নামের অর্থ নিয়ে ভাবত। যারা লেখালেখি করে তারাও নাটকের সুন্দর নামে উৎসাহিত হয়ে গল্প-উপন্যাসের সুন্দর নাম দিত। নাম নিয়ে রীতিমতো গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা করা হতো। এটাই আমাদের নাটক ও সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। সেই বিটিভির সময় থেকে আধুনিক যুগের স্যাটেলাইট চ্যানেলেও নাটকের সুন্দর ও অর্থবোধক নাম ব্যবহার করা হতো এবং হচ্ছে। দর্শক এসব নাম দেখে নাটক দেখায় উৎসাহ পেত এবং পায়। অথচ এ সময়ে একটি নাটক দর্শক দেখল কি দেখল না, তা নির্ভর করে ইউটিউব চ্যানেলে কত ভিউ হলো তার উপর। নাটকটি মানস¤পন্ন না হলেও ভিউ সংখ্যাই এর দর্শকপ্রিয়তা নির্ণয় করছে। যে নাটকের যত বেশি ভিউ হচ্ছে সেটিকেই সেরা হিসেবে ধরা হচ্ছে। ফলে নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মানের দিকে খেয়াল না করে ভিউয়ের পেছনে ছুটছেন। এতে ঐতিহ্য হারাচ্ছে আমাদের নাটক। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি নাটক পুরো না দেখলেও তা ভিউ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে নাটকের মান বিচার করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে চটুল গল্পের ভাঁড়ামোপূর্ণ নাটকের সংখ্যা বেশি। বিগত দুই বছরে সর্বাধিক ভিউয়ের বেশিরভাগ নাটকের গল্প দেখলে বিষয়টি ¯পষ্ট হয়ে উঠে। অনেক নির্মাতা মনে করেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেকে ভাইরাল গল্পের বাইরে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও সেই ধরনের গল্পের নাটকগুলোর বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে। ফলে গল্পনির্ভর নাটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভাল গল্পের নাটকগুলো প্রচারণার অভাবে দর্শকের চোখে কম পড়ছে।
অন্যদিকে, বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলে নাটকের প্রিভিউ কমিটি না থাকায় নাটক নির্বাচন করছে মার্কেটিং বিভাগ। তারা গল্পনির্ভর নাটকের চেয়ে কাটতির কথা মাথায় রেখে সম্ভাব্য ভিউসর্বস্ব নাটকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাট্যবোদ্ধারা মনে করছেন, নাটকের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা ও মান কখনো এক হতে পারে না। এই সময়ের অনেক শিল্পীর ফলোয়ার বেশি। একইসঙ্গে তাদের নাটকে ভিউ ভালো হচ্ছে। কিন্তু তাদের মানস¤পন্ন কাজের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ নাটক একইরকম মনে হয়। আবার টিভিতে নাটক প্রচারের পর সেটি চলে যাচ্ছে ইউটিউবে। এখানে বিভিন্ন শ্রেণির দর্শক আছে। তবে বেশির ভাগ দর্শক কমেডি নাটক দেখতে পছন্দ করে। তবে আমাদের উচিত দর্শকদের জোর করে না হাসিয়ে গল্পের মাধ্যমে হাসানো। আমাদের নাটকের নিজস্বতা আছে। আমাদের প্রয়োজন আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। একুশে পদপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াত বললেন, একটা সময় প্রমিত বাংলায় মানুষ কথা বলত। টিভি নাটক দেখে বাচ্চারা কথা বলা শিখবে, সেই জায়গা থেকে আমরা নাটক করতাম। এখন নাটকের নাম শুনলেই মোটামুটি সব বোঝা যায়। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে ভাষাটাই যেখানে হারিয়ে গেছে, নাম নিয়ে আর কী আশা করতে পারি। অথচ আশি ও নব্বইয়ের দশকের নাটকগুলো নিয়ে এখনো দারুণ সব প্রতিক্রিয়া পান আবুল হায়াত। তিনি বলেন, এখনো বুঝি, দর্শক ওই রকম গল্প চায়। আমরা ভাঁড়ামি গেলাতে চাইছি। জানি না, কীভাবে বেরিয়ে আসা যাবে এখান থেকে। এখানে টেলিভিশন চ্যানেলের দায় অনেক। তিনি বলেন, সব নাটকের নাম এমন, তা নয়। এই শহরে, আমাদের সমাজবিজ্ঞান, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মায়া সবার মতো না, কাঠপেন্সিলের কাহিনী, তুমি ফিরে আসোনি, আগন্তুক, ফেরা, শুনতে কি পাও-এর মতো নামের নাটকও আছে। নাট্যজন মামুনুর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইদানীং বেশির ভাগ নাটকে যে ধরনের নাম দেওয়া হয়, এগুলো অসভ্য লোকের বর্বর কাজ। আমাদের দুঃখ ছিল, টেলিভিশন নাটক তো গেল, এখন ইউটিউব আরও জঘন্য। নাটকের নামের এই বিকৃতির পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া উচিত। নাটকের বাজেট কম, এ কারণেই কি নামের এই হাল? মামুনুর রশীদ বলেন, এখানে বাজেট বিষয় নয়। এ ধরনের নাম কিছু টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ পছন্দ করে, যার প্রভাব অন্যদের ওপর পড়ে। শুনেছি, যারা অনুষ্ঠান বিভাগে আছেন, তারা এমনও বলেন, নাটকে মজা কোথায়, মজা বের করেন। আমরা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে একটি নাটক বানাচ্ছিলাম, মজা নেই বলে চ্যানেল সেই নাটকের প্রচার বন্ধ করে দেয়। নির্মাতা ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, এখন নাটক চলে গেছে চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগ ও এজেন্সির হাতে। তারাই নাটকের গল্প ও শিল্পী নির্ধারণ করে দেয়। কি ধরনের গল্পে কাজ করতে হবে এবং কোন কোন শিল্পীকে নিতে হবে তা নির্বাচন করে চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগ ও এজেন্সিগুলো। যার কারণে অনেক সময় নির্মাতারা নিজেদের পছন্দের গল্পে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার এটিও সত্যি এই সময়ের অনেক তারকা ভালো ভিউ হতে পারে এমন গল্পের নাটকগুলোতেই বেশি কাজ করছেন। যে নাটকের বেশি ভিউ হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর শিল্পমান কেমন হবে কিংবা দর্শকদের মনে দাগ কাটবে কিনা, তা তাদের কাছে বিবেচ্য নয়। নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সময়ে কোটি ভিউর নাটকের দর্শকের বেশির ভাগ তরুণ। এরা শিল্পের চেয়ে হাসি-তামাশাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশির ভাগ কমেডি নাটকের ক্লিপ প্রমোট করা হচ্ছে। দর্শক ক্লিপ দেখে আগ্রহী হয়ে সেসব নাটক দেখছে। দর্শককে নাটক উপহার দেয়ার বিষয়টি নির্মাতা ও প্রযোজকদের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তার যদি ভিউয়ের কথা বিবেচনা না করে ভাল গল্পের ম্যাসেজ নির্ভর নাটক নির্মাণ করে ইউটিউবে দেন, তাহলে দর্শকও ধীরে ধীরে এসব নাটক দেখা শুরু করবে। মোট কথা, দর্শকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সস্তা গল্পের ভাঁড়ামোপূর্ণ নাটক দিয়ে ভিউ বাড়িয়ে ব্যবসায়িক চিন্তা বাদ দিতে হবে। আমাদের নাটকের ঐতিহ্য রয়েছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। কারণ, ইউটিউবের মাধ্যমে সারাবিশ্বে আমাদের নাটক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ভাল গল্পের নাটক না হলে আমাদের নাটক স¤পর্কে বিশ্বে মন্দ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।