Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি

ভর্তির নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা

মো. শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

 ত্রিশালে যে বিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লেখাপড়া করেছেন সেই বিদ্যালয় আজ কোন পথে? জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইমলামের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালের ঐতিহ্যবাহী ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে নীতিমালা ভঙ্গ করে চলতি বছরে অতিরিক্ত ২৮২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। বিধিবর্হিভূত ভর্তির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। গত ৩০ অক্টোবর অভিযোগটি সরজমিনে তদন্ত করেন ভর্তি কমিটির সভাপতি ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজামান ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুল ইসলাম। গত ৩ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রেরণ করেছেন। তদন্তে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি মাসে মোট ৬২৫ শিক্ষার্থী থাকলেও অক্টোবর মাসে দেখা যায় ৯০৭ জন শিক্ষার্থী। এতে দেখা যায় ৬ষ্ঠ থেকে নবম পর্যন্ত মোট অতিরিক্ত ২৮২ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা থেকে এসব তথ্য প্রমাণ মিলেছে।

ভর্তি কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ভর্তি বিধি অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নীতিমালা মোতাবেক কমিটির মাধ্যমে ভর্তি করা হচ্ছে। কমিটির অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, সকল শিক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বিদেশে চলে যান। সেখানে কয়েক বছর বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে পুনরায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে স্বপদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। কিছুদিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরির করার পর বিদ্যালয়ে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হয়ে হাজত বাস করেন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারী বিভিন্ন অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এই মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। দোষি সাব্যস্ত হলে শিক্ষা অধিদফতর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পূনরায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে অতিরিক্ত ২৮২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে আলোচনায় আসেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অভিযোগটি জানতে পারেন । লিখিত অভিযোগটি আমার হাতে পৌঁছেনি। অভিযোগটি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে নজরুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে যোগদান করেই দেখি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিনি। স্থানীয় এমপি ও ভর্তি কমিটি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ডিও লেটারের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়েছে। আদায়কৃত ফি আমি আত্মসাত করিনি, ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী কবির বাল্যস্মৃতি বিজড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার জন্য দ্রুত শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ