Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা মেঘনা বিভাগ প্রস্তাব স্থগিত : টিকে রইলো কুমিল্লা নামে বিভাগের স্বপ্ন

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪১ পিএম | আপডেট : ৯:২৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে পদ্মা ও মেঘনা বিভাগ এ বছর হচ্ছে না। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উঠলে প্রস্তাব দুইটি চলতি বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

নিকারের সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন বিভাগ করার প্রস্তাব দুটি স্থগিত রাখা হয়েছে। এটা এখন অগ্রাধিকারমূলক বিষয় নয়। কারণ, এখন সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এখন একেকটি বিভাগ করতে গেলে এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই এখন এটি স্থগিত রাখা হয়েছে।

বৈঠকের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এ দুইটি বিভাগ করা নিয়ে অন্যান্য জেলা, নামকরণসহ অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে কুমিল্লা জেলার নামে বিভাগ দাবি দেশে-বিদেশে সর্বমহলে জোরেশোরে উঠেছে। রাজনৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রী এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। তাই সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আপাতত এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে।

জানা যায়, ময়নামতি-আয়মতি নয়,‘মেঘনা’র বদলে কুমিল্লা নামের বিভাগের দাবিতে দেশে-বিদেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তত্কালীন সময়ে কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন হাজী বাহার। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আবারো বিভাগ দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি মহান জাতীয় সংসদে, ঢাকায়,কুমিল্লায় বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঘরোয়া আড্ডায় কুমিল্লা নামে বিভাগের নামের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলেন। সম্প্রতি বছরে তিনি ইটালি, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব,দুবাই, মালদ্বীপ সহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন এসময় প্রবাসী বাংলাদেশীরাও কুমিল্লা নামে বিভাগ দাবীর সাথে একাত্মা ঘোষণা করে হাইকমিশনের মাধ্যেমে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন। এছাড়া কুমিল্লা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কুমিল্লা বিভাগ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছেন। অনেকেরই ধারণা এসবকিছু মিলিয়ে কুমিল্লাবাসীর হৃদকম্পন অনুভবে এসেছে প্রধানমন্ত্রী। নিকারের বৈঠকে নদীর নামে বিভাগের প্রস্তাব স্থগিত হওয়াতে এমনটাই ভেবে এখনো প্রত্যাশার আলো দেখছেন কুমিল্লার সর্বপেশার আপমার জনতা। তাদের অভিমত, কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন হবে।

রাজনৈতিক কর্মী আহাম্মেদ নিয়াজ পাবেল সোমবার দুপুরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “ আবারো নিকারের বৈঠকে স্থগিত। কুমিল্লা নামে কুমিল্লা বিভাগ এ অঞ্চলের শুধু প্রানের দাবী নয় বরং যৌক্তিক। যে বা যাহারা এর বিপক্ষে কলকাঠি নাড়েন বা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন 'না পাওয়ার চাইতে মেঘনা নামেই হয়ে যাক' তারা গণধিকৃত হবেন। সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে ইনশাআল্লাহ একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই কুমিল্লা নামে বিভাগ আসবে।”

কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বলেন, কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক জেলা। আমাদের আবেগ-ভালোবাসার নাম কুমিল্লা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই জেলার নামেই আমরা বিভাগ চাই। তিনি নিশ্চই কুমিল্লাবাসীর গণ আকাঙ্খার মূল্যায়ন করবেন ’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রের পূর্বের তথ্যমতে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর চাপ কমানো এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে প্রায় এক দশক আগে থেকেই নতুন বিভাগ গঠনের আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলা- ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর নিয়ে পদ্মা বিভাগ। এ ছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও লহ্মীপুর- এই ছয়টি জেলা মিলে মেঘনা বিভাগ।

দেশে বর্তমানে ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। এর সবক'টিই সংশ্লিষ্ট বড় শহরের নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে। এবারই প্রথম স্থানীয় শহরের নামের বাইরে বিভাগের নামকরণ হতে যাচ্ছে। এ দুটি বিভাগ অনুমোদন পেলে মোট বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টিতে। বিভাগ হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক ইউনিট। এর পরই রয়েছে জেলা ও উপজেলার অবস্থান।

এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিভাগ দুইটি করলে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা করে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে দরকার। সেই সঙ্গে প্রতিটি বিভাগে অন্তত ২৮টি করে নতুন দপ্তর খুলতে হবে। সেসব দপ্তরে জনবলসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় জড়িত। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার উন্নয়ন কাজের অর্থ বরাদ্দে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই নতুন বিভাগের কাজ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

জানা যায়, কুমিল্লা ও ফরিদপুরের স্থানীয় পেশাজীবি ,সুশীল সমাজ ও রাজনীতিকরা তাদের শহরের নামেই বিভাগ চেয়েছিলেন। বিশেষ করে কুমিল্লার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে নদীর নামে বিভাগের নামকরণ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কুমিল্লার নামের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের নাম জড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, বিভাগের ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুটি বিভাগ বানাব আমাদের দুটি নদীর নামে। একটি পদ্মা, একটি মেঘনা। নাম ভিন্ন হলেও মেঘনা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে কুমিল্লা ও পদ্মা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে ফরিদপুর। ওই অনুষ্ঠানে কুমিল্লা নামে বিভাগের জোরালো দাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি। বিভাগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাথে এমপি বাহারের মধুর বচরার ভিডিও ভাইরাল হয়। দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামে বিভাগ: বিএনপি

শনিবার কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে ‘কুমিল্লা’ নামেই বিভাগের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে ওই গণসমাবেশ হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণসমাবেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কুমিল্লাবাসী আপনারা কী নামে বিভাগ চান?’ জবাবে সমাবেশে উপস্থিত তিন জেলার নেতা কর্মীরা দুই হাত উঁচিয়ে ‘কুমিল্লা’ ধ্বনিতে আওয়াজ করেন। তখন তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ