Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস দূর করতে সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৩১ পিএম

শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থার সম্ভাবনা ও সমস্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক শিক্ষা সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, নবী রাসুলদের দাওয়াতি কাজের মূল ভিত্তি ছিল জ্ঞানের আলো দিয়ে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসা। ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানকে মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্মপরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত করে, দূরদর্শিতা সৃষ্টি করে। তাই আল্লাহ তাআলা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে প্রথমে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন। যে জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়, তাই ইসলামি শিক্ষা। সামাজিক অনাচার, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস দূর করে উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে একমুখী ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক শিক্ষা সেমিনারে বক্তারা এইসব কথা বলেন । শিক্ষা গবেষণা সংসদ, ঢাকার আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক নুর নবী মানিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বি আইআইটি এর মহাপরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আবদুল আজিজ। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কোরবান আলী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানি, আইইএস এর পরিচালক ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী বলেন, যে শিক্ষা মানুষের কল্যাণে ও উপকারে আসে না, তা শিক্ষা নয়। যে শিক্ষা দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির সহায়ক, তাই প্রকৃত শিক্ষা। তাই আমরা বলছি সব মানুষের কল্যাণের জন্য একমুখী ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইসলামি শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মানবকল্যাণ, দেশপ্রেম, সামাজিক উন্নয়ন, ত্যাগ ও বিনয়। সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং আদর্শ গুণাবলিসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করতে দেশের সকল স্তরে ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কুফল দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। আজ দেশে নীতিনৈতিকতার বড় অভাব। ঘুষ, দুর্নীতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, কালোবাজারির মতো গুরুতর সব অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। অফিসের বড় কর্তা থেকে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত প্রায় সর্বস্তরের কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত। স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ, বাবার লাশের জন্য বসে থাকা মেয়েকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, হত্যার মতো নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। নৈতিকতার এ বিপর্যয় জাতীয়ভাবে আমাদের অসহায়ভাবে সবাইকে অবলোকন করতে হচ্ছে। ওহির জ্ঞান ছাড়া কোনো মানুষ জ্ঞানী হতে পারে না। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে। দুনিয়ার সকল শিক্ষাবিদই এ বিষয়ে একত যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্র গঠন।

ড. এম. কোরবান আলী বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মন, মস্তিস্ক ও চরিত্রকে গঠন করার চেষ্টা প্রত্যেকটি সচেতন জাতির কার্যসূচির প্রধান অঙ্গ। প্রত্যেক দেশের কোন না কোন আদর্শ থাকে। সে আদর্শ নিজস্বও হতে পারে অথবা অপর কোন দেশের নিকট থেকে ধার করাও হতে পারে। আমাদের আদর্শ হলো মুহাম্মদ সা:। তিনি সমগ্র মানুষের জন্য শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের বেলায় আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে সামনে রেখে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা অপরিহার্য।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, ধার করা শিক্ষায় আদর্শ মানুষ তৈরি হতে পারে না। আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রবান মানুষ তৈরি হতে হলে অবশ্যই ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইসলামের শিক্ষার অভাবেই মুসলিম জাতি আজ সমগ্র বিশ্বে পদে পদে বিপর্যস্ত ও পদদলিত। তাই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা এবং চালু করা।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক বলেন, শিক্ষা মানে জ্ঞানার্জন করা। সত্যের ওপর ভিত্তি করে জীবন গড়া। ইংরেজদের প্রবর্তীত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বর্তমান সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলামী মূল্যবোধ শেখার কোনো সুযোগ পায় না। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায়ও বর্তমানে ইসলামকে একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা রূপে শিক্ষা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলামের বিশ্বজনীন ব্যাপক আদর্শিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. আবদুল আজিজ বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার একপর্যায়ে যখন সেকুলারিজম এবং বস্তুবাদী শিক্ষা প্রবেশ করে তখনই সমাজে ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার কাছে ফিরে যেতে হবে এই অনুভূতি থাকলে ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবন সুন্দর হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অবশ্য ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সেমিনারে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। তা হলো: ১.ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষা ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা। ভিন্নধর্মের মানুষদের জন্য স্বস্ব ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা। ২. সকল ধর্মের উপর তুলনামূলক আলোচনা সম্বলিত বিশেষ কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা। ৩. বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যবসা ও কারিগরী শিক্ষা অনুষদের প্রচলন করা। ৪. নৈতিক শিক্ষার প্রসারের জন্য জাতীয় সমন্বিত পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক করা। ৫. জাতীয় শিক্ষা মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আরবী ভাষাকেও স্বীকৃতি প্রদান করা। ৭.কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা। এছাড়াও শিক্ষা ও গবেষনার জন্য আরও বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ