Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুল্ক ছাড়াই বিমানে আসছে বিদেশি বন্যপ্রাণী

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম


কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিমানবন্দরে সক্রিয় আট সিন্ডিকেট
সাখাওয়াত হোসেন : দেশের বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন ক্রেতাশ্রেণী। আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের কাছে বন্যপ্রাণীর অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ঘোষণা না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে বির্ভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পশু-পাখি। অবৈধভাবে আনা এসব পাখির অধিকাংশ আসছে হযরত শাহজালাল (রা:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে। বিমানবন্দরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব পশু-পাখি আনছে কোনো ধরণের ট্যাক্স ছাড়াই। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ভেতরে একাধিক বেসরকারি চিড়িয়াখানা, অবকাশকেন্দ্র ও বাগানবাড়িতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী এনে রাখা হয়। তাছাড়া বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে মূল চ্যালেঞ্জ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় জটিলতা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, বন্যপ্রাণী নিধন এবং ব্যবসার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ১২ বছরের কারাদণ্ড।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে আটটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পশু-পাখি অবৈধভাবে আনার সাথে জড়িত। মাঝে-মধ্যে এসব সিন্ডিকেটের আনা পশু-পাখি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে জব্দ হয়। এ সব ঘটনায় জড়িতদের জরিমানা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও আড়ালেই থেকে যায় প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা কাস্টমস হাউসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন সময় ঘোষনা না দিয়ে দামি পাখি এমনকি পশুও বিমানের মাধ্যমে আনা হচ্ছে। এভাবে আনা পশু-পাখি জব্দ করতে ও নিয়মিত মনিটরিং করতে বিমানবন্দরে বন কর্মকর্তাদের জন্য পাশ ও একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে তা নাই। যার কারণে স্বাধীনভাবে নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, পশু-পাখি বিদেশ থেকে আনার সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনেক শক্তিশালী। এদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে বা আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি হতে হয়। তাছাড়া নানা ধরনের হয়রানিতো রয়েছেই। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কখনোই কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে না সংশ্লিষ্টরা।

বিমানবন্দরের কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গোতে অভিযান চালিয়ে ১৭টি বিদেশি ব্রাউনি প্যাঁচা জব্দ করা হয়েছে। পরে এনওসি বর্হিভূত হওয়ায় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা ও বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। রাতে এসব পাখি গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক নিগার সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, মেসার্স শাহজালাল পেটস এন্ড ফার্মিং নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মালি থেকে বৈধভাবে আনা ১৫টি হর্ণবিল পাখির সঙ্গে এনওসি বর্হিভূত ১৭টি প্যাঁচা আনে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এনওসি বর্হিভূত ব্রাউনি প্যাঁচাগুলো জব্দ করে এবং বিষয়টি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানায়। পরে কাস্টমস আইন ১৯৬৯ লঙ্ঘন করায় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও তাদের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আমদানিকারকের চালানে প্রতিটি প্যাঁচার দাম দেখানো হয়েছে ৮৪৪ মার্কিন ডলার।

তিনি আরো জানান, এভাবে আনা পশু-পাখি জব্দ করতে ও নিয়মিত মনিটরিং করতে বিমানবন্দরে বন কর্মকর্তাদের জন্য পাশ ও একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে তা নেই। যার কারণে স্বাধীনভাবে নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।

সূত্র জানায়, গত ২১ নভেম্বর সাভারে বিলুপ্তপ্রায় বন্য উল্লুক ও বানরসহ মো. হাদিসুর রহমান (৪২) নামে একজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা উত্তর ডিবি পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর ডিবির ইন্সপেক্টর মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাদিসুর রহমানকে পরিবহণ নিষিদ্ধ বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী একটি বানর ও একটি উল্লুকসহ আটক করা হয়। হাদিসুর বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম থেকে প্রাণী দুটি সাতক্ষীরা নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন। গত বছরের ১৪ অক্টোবর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা হয় পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগাল থেকে আনা দুটি জাতের ৩৫টি পাখি। অনাপত্তি সনদ না থাকায় সেগুলো হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর খালাসের অনুমতি দেয়নি। পরে পাখিগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ