Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৪ মাসে কমেছে ২৫ শতাংশ

বিদেশি ঋণেও ধাক্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

 রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা লেগেছে বিদেশি ঋণপ্রবাহেও। যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপে পড়েছে। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশাপাশি রিজার্ভও কমছেই। নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। এই চাপ সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন কম সুদের বিদেশি ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধি। কিন্তু তেমনটি না হয়ে উল্টো কমছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দুই বছরের করোনা মহামারির পর যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু বিদেশি ঋণে সেই জোয়ার আর নেই। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোট ১৯৭ কোটি ৬ লাখ (১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৪ মাসে ২৬২ কোটি ৬২ লাখ (২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ ছাড় করেছিল দাতারা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গত বৃহস্পতিবার বিদেশি ঋণ প্রবাহের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদেশি ঋণপ্রবাহের উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছর।

নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ৪৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছিল, যা ছিল গত জুলাইয়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে হোঁচট খায়। ওই মাসে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করে দাতারা, যা ছিল আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম।

পরের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে আসে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আর সব শেষ অক্টোবরে এসেছে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। তারপরও ৪ মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বিদেশি ঋণ কম এসেছে দেশে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতির বিশ্লেষক আতিউর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে কম সুদের বিদেশি ঋণ খুবই প্রয়োজন। আমাদের রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে। এই চাপ সামলাতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণ প্রয়োজন। এসব সংস্থার পাইপলাইনে যেসব ঋণ আছে, সেগুলো দ্রুত আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। একটা সুখের খবর হচ্ছে, আইএমএফ ঋণ দিতে রাজি হওয়ায় সরকার সাহস পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্য সংস্থাগুলোও এখন এগিয়ে আসবে। সরকার সহজেই সংকট মোকাবিলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সাল থেকেই সরকার সাহস সঞ্চার করে ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতিও আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে দাতাদের কাছ থেকে যে ২৬২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য এসেছে ২৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর অনুদান পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ১৮৭ কোটি ৭৮ লাখ (১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলার। অনুদান এসেছিল ৯ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে জাপান, ৫৮ কোটি ৭ লাখ ডলার। চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দিয়েছে ২৪ কোটি ৭ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। ভারত দিয়েছে ১১কোটি ৯১ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৭৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

ইআরডির তথ্য বলছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে দাতাদের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি বেশ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৪ মাসে ২৭৬ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দাতারা। এই বছরের জুলাই-অক্টোবর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাত্র ৪১ কোটি ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৬ গুণের বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে আগে নেয়া ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ৭২ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত বছরের একই সময়ে সুদ-আসল বাবদ ৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার ডলার শোধ করা হয়েছিল। এ হিসাবে এই ৪ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ কম অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে সরকারকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ