Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোলার আছে পাওয়ার নেই

আলো জ্বলছে না সৌরবাতির

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মোরেলগঞ্জে কোটি টাকার সোলার সড়ক বাতির ৮০ শতাংশই নষ্ট
ফাহাদ হোসেন, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) থেকে
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দেখভালের অভাবে কাক্ষিত সুফল মিলছে না প্রত্যন্ত গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়ক বাতির সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে। কোটি টাকার সৌর সড়কবাতির প্রায় ৮০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সোলার লাইট স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যে তা দেখতে অনেকটা খেলনা লাইটের মত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সোলার আছে বাতি নেই, ল্যামপোস্ট ভেঙে পরেছে। দেখভালের অভাবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার বা দেখভালের কথা থাকলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না লাগামহীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
নিম্নমানের, নামসর্বস্ব সৌর প্যানেলসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজন করে একটি সিন্ডিকেট এই বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সৌরবাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় অন্ধকারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষকে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে পরবর্তী কয়েকটি অর্থ বছরে ব্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই উপজেলায় স্ট্রিট সোলার ও হোম সোলার স্থাপন করেন। এরপর আরো একটি প্রতিষ্ঠান স্ট্রিট সোলার লাইট ও হোম সোলার স্থাপনের কাজ করেছেন। এই উপজেলায় আনুমানিক প্রায় ৫০০ এর অধিক স্ট্র্রিট সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছিল। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, রাস্তা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের সামনে পথচারীদের সুবিধার্থে ২৫, ৩০ ও ৫০ ওয়াটের এ স্ট্রিট সোলারগুলো বাসানো হয়। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এসব সোলার লাইটগুলোর দেখভালের দায়িত্ব কার এমন প্রশ্ন স্থানীয় সাধারণ মানুষের! নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই সোলার লাইট স্থাপন ও দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার, কিন্তু মোরেলগঞ্জের এসব লাইট সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লাগিয়ে যাওয়ার পর আর সেগুলো সংস্কার করা হয় না।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউনিয়নসহ পৌরসভায় মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে সোলার সিস্টেম প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টের বরাদ্দ ধরা হয়েছে আনুমানিক ৫৬ হাজার ৪৯০ টাকা। প্রতিটি স্ট্রিটলাইট মেরামতের জন্য তিন থেকে চার বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি রয়েছে। এদিকে সড়ক বাতিগুলো না জ্বলায় সরকারের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। সরেজমিনে কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, জনবহুল এ সড়কের অধিকাংশ সৌরবাতি অকেজো হয়ে আছে। সৌরবাতির খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। অনেক স্থানে ব্যাটারি ও লাইট হারিয়ে গেছে। কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে বারইখালী, বহরবুনিয়া, দৈবজ্ঞহাটি, খাওলিয়া, রামচন্দ্রপুর, নিশানবাড়িয়া, হোগলাবুনিয়া, কয়েকটি বাজারসহ পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলোর অধিকাংশ যেন এক একটি খেলনার মত দাড়িয়ে রয়েছে, সেগুলো এখন অকেজো, দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে।

বারইখালী এলাকার একজন ইউপি সদস্য জানান, নিম্নমানের উপকরণ দেওয়ায় সড়ক বাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। রাত হলেই বাজারগুলোসহ তার আশপাশের সড়কে নেমে আসছে গভীর অন্ধকার। সড়কে চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও সৌরবাতিগুলো ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে বহরবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান টি এম রিপন বলেন, তার ইউনিয়নে সোলার প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ ল্যাম্পপোস্টগুলো অধিকাংশ বন্ধ হয়ে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেয় না। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কয়েকবার বলেছি তাতে কোনো ফল আসে না, সরকারের এতো টাকার সড়কবাতি ব্যবহারে কোন সুফল আসছে না।

খাওলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকটি বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বসানো সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল জাবির এর সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ