Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অবহেলায় মোগল স্থাপত্য

ঘাগড়া লস্কর খানবাড়ি মসজিদ

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কালের সাক্ষী মোগল আমলের ‘ঘাগড়া লস্কর খান বাড়ি জামে মসজিদ’। প্রত্নতত্ব বিভাগের পরিচর্যার অভাবে প্রচীনতম এ মসজিদটি করুণ দশা। বাইরে থেকে বিশাল মনে হলেও ভেতরে বড় নয়। এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের পূর্ব পাশে ১টি মাত্র দরজা, উত্তর এবং দক্ষিণে দু’টি জানালা। ভেতর ইমাম ছাড়া ৩ কাতারে ১০ জন করে ৩০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। বারান্দায় ৫০ জন নামাজ আদায় করেন। অদ্ভুত অনুভূতি! উপস্থিত মুসল্লি ব্যতিত বোঝা সম্ভব নয়। স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খানবাড়ি মসজিদটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। প্রাচীনতম মসজিদের নাম ও কালক্রমে ‘ঘাগড়া লস্কর খানবাড়ি মসজিদ’ নামেই পরিচিত। শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৪ কিলেমিটার দূরে মসজিদটি অবস্থিত। গায়ে যে নিদর্শন মেলে তাতে অনুমান হয়- মোগল সম্রাট আমলে বক্সার বিদ্রোহের নেতা হিরোঙ্গী খাঁর বিদ্রোহের সময় নির্মিত। দরজায় কষ্টিপাথরে খোদাই করে আরবিতে প্রতিষ্ঠাকাল হিজরি ১২২৮ এবং ইংরেজি ১৮০৮ সাল লিখা। গঠন পদ্ধতি, স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। ভেতরে দু’টি সুদৃঢ় খিলান। এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির দৈর্ঘ-প্রস্থ সমান। ভেতরের ৩০ ফুট দৈর্ঘ ৩০ ফুট প্রস্থ। মধ্যস্থলে বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট-বড় দশটি মিনার। মধ্যে চার কোনায় চারটি। একটি দরজা। ভেতরে মেহরাব এবং দেয়ালে অঙ্কিত কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল। ৫৮ শতক জমির ওপর মসজিদের মূল ভবন। বারান্দা ১৭ শতকে। ৪১ শতকে কবরস্থান।

ইমাম হাফেজ মো. রহুল আমীন জুম্মাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। দুই যুগ আগে ২১ সদস্যের কমিটি করা হলেও সভাপতির মৃত্যুর পর কমিটি করা হয়নি। স্থানীয় শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার, আলহাজ রেজায়ুর রহমান মাস্টার, ব্যবসায়ী সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব আলী ফর্সাসহ এলাকাবাসী ও ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তার যোদ্ধারা আত্মগোপনে থাকে। আজিমোল্লাহ খাঁন নামে যোদ্ধা এখানে বসবাস করেন। তিনিই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। পালিয়ে বসবাসে তার নাম হয় পলায়ন খাঁন। মসজিদের সামনে স্থাপনের তারিখ ১২২৮ হিজরিতে প্রতিষ্ঠিত। পুনঃসংস্কারের সময় নেম প্লেটে আজিমোল্লাহ খাঁনের ২ পুত্র আফজাল খাঁন ও গোলাপ খাঁনের নাম লেখা রয়েছে। নির্মাণ শৈলী মনোরম। প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন। ওপরে পূর্ণ ছাদই এক গম্বুজে তৈরি। ৪ কোনে ৪টিসহ মোট গম্বুজ ১২টি। গম্বুজগুলো সুনিপূণভাবে তৈরি। দেয়ালের গাথুনী ৪ ফুট পাশ, চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা। ভেতরে সুন্দর কারুকার্যে নকশা। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ কিছু কাজ করেছে। বাইরে চারপাশে দেয়াল। সম্মুখে কিছু জায়গা পাকা। মসজিদের ইমাম জানান, স্থান সংকুলান না হওয়ায় সমস্যা হয়। ১৯৬৮ সনের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনে মসজিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মসিজদের হেফাজত ও সংরক্ষণে ১জন খাদেম সরকারিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে নেই। পত্মতাত্ত্বিক বিভাগ বহুবার পরিদর্শন ও করেছে। দেখতে বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শনার্থীও আসে। ১ জন সরকারি খাদেম ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং মসজিদটি সংরক্ষণে ও সংস্কারের দাবি করেছেন এলাকাবাসি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, প্রাচীনতম মসজিদটি দেখভাল বা সংস্কারের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব জাতীয় জাদুঘর প্রত্নতত্ব বিভাগের। পরিচর্যা ও মেরামতের দায়ীত্বও তাদের। ভঙ্গুর অবস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর তাগিদ দেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ