পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চার লেন থেকে আট লেন। তারপরেও নির্বিঘ্নে চলতে পারে না যানবাহন। পথে পথে ভোগান্তি, যানজট। কাঁচপুর সেতু থেকে শিমরাইল মোড়, মেঘনা ও গোমতি সেতুর এপাড়-ওপাড় প্রতিদিনই ১৫-২০ মিনিট করে যানজট। গাড়ির চাপ বাড়লে এই মিনিটের দৈর্ঘ্যও বাড়ে। একপর্যায়ে সময়ক্ষেপণে যাত্রীদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে পরার উপক্রম হয়। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল মালেক বলেন, আগের তুলনায় মহাসড়কের যানজটের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরেও প্রতিদিনই কমবেশি যানজট কেন হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হাইওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন করে সেতু না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে, মেঘনা সেতুতে ওঠার সময় অতিরিক্ত মালবাহী যানগুলো খুব ধীরে ওঠে। এতে করে পেছনের দিকে যানবাহনগুলো থেমে যায়। অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, আট লেনের মধ্যে দুই বা তিন লেন দখল করে সারি সারি বাস দাঁড়ানো। কোথাও কোথাও লেনের উপরেই বসানো হয়েছে বাস কাউন্টারসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। কোথাও কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের স্ট্যান্ড। মহাসড়ক দখলের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দেয়ার কথা স্বীকার করে এক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, পুলিশ না চাইলে মহাসড়কের উপর কেউই থাকতে পারবে না। তবে মন্ত্রী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের) যখন এই পথে যান তখন পুলিশ একেবারে ‘দায়িত্বশীল’ হয়ে ওঠে। তখন তারা আর চাঁদার ধার ধারে না। মহাসড়ক থেকে সবাইকে উঠে যেতে বাধ্য করে।
নির্বিঘ্নে যান চলাচলের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত আবার আট লেন। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আট লেন মহাসড়কের উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের ১৪ আগস্ট। তবে উদ্বোধনের পর পরই আট লেন মহাসড়কের চেহারা অনেকটাই পাল্টে যায়। দখলদাররা দখল করে নেয় মহাসড়কের দুদিকের দুটি করে লেন। এ নিয়ে পত্রিকাতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। গত মাসের শেষের দিকে মহসড়ক ও এর পার্শ্ববর্তী সড়ক ও জনপথের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদের একদিন পর সেগুলো আবার স্বরুপে বিকশিত হয়েছে। ভেঙে ফেলা দোকানপাট, বাজার, বসতি, গ্যারেজগুলো আবার নতুন করে তৈরী করা হয়েছে। আট লেন মহাসড়কের পূর্ব দিকে শনিরআখড়ায় সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে বিশাল বাজার বসিয়েছিল স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গত মাসে সড়ক ও জনপথের অভিযানে সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়। তবে মাত্র একদিনের ব্যবধানে সেগুলো আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। একইভাবে রায়েরবাগ ও মাতুয়াইল এলাকায় যে সব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছিল সেগুলো আবার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় দখলদাররা জানান, স্থানীয় এমপিকে জানিয়ে তারা আবার নতুন করে ঘর তুলেছেন। এবার আর উচ্ছেদ হবে না বলে অবৈধ দখলদারদের আশ্বস্ত করেছেন এমপির লোকজন। অভিযানে মাতুয়াইলের দুটো গাড়ির গ্যারেজ উচ্ছেদ করা হলেও এখন তারা আবার মহাসড়কের উপরেও গাড়ি রেখে মেরামতের কাজ করছে। মাতুয়াইল মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কাছে মহাসড়কের উপরেই রাখা হয় বড় বড় কাভার্ডভ্যান। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের দাবি, নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশ টাকার বিনিময়ে কাভার্ডভ্যানগুলো অসময়ে রাজধানীতে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়। কাভার্ডভ্যানগুলো মহাসড়কের উপরে রেখে চালকরা চলে যায়। সেগুলো সরানোর মতো ব্যবস্থা না থাকায় থানা পুলিশের কিছুই করার থাকে না।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেতুতে ওঠার আগে মহাসড়কের ২-৩ লেন দখল করে বসানো হয়েছে বাস কাউন্টার, মোবাইল ফোনের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকান। সড়কের আরেক পাশে রাস্তা দখল করে বন্ধু পরিবহনের বাসস্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। একটার পর একটা বাস এসে মহাসড়কের উপর দাঁড়াচ্ছে। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পুলিশের সেদিকে কোনো নজর নেই। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে ছেড়ে গাড়িগুলো কাঁচপুর এলাকায় এসেই যানজটে পড়ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে যানজট লেগে থাকে। সেতু পার হওয়ার পর আবার ত্রিমুখী যানজটে আটকে পড়ে যানবহানগুলো। ত্রিমুখী চাপ সামাল দিতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ হিমশিম খায়। তবে অনেকেরই অভিযোগ, এখানে যানজটের দিকে নজর না দিয়ে পুলিশ চাঁদাবাজিতেই বেশি নজর দেয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নামে অবৈধভাবে প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা তোলে সিদ্ধিরগঞ্জ-আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুস সালামের লোকজন। এই চাঁদা তুলতে গিয়ে সবগুলো বাসকে দাঁড় করানো হয়। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নামে এই চাঁদা তোলা হলেও এই টাকা সিটি কর্পোরেশন পায় না। দুই বছর আগে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু শ্রমিক লীগের ওই নেতা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে চাঁদার টাকা তুলেই যাচ্ছে। এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। একজন বাস মালিক বলেন, আমরা এই চাঁদা বন্ধের দাবি করে আসছি বহুদিন ধরে। কিন্তু প্রশাসনের কাছে থেকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা পাই না। কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে শিমরাইল অতিক্রম করার পর মদনপুর এলাকায় গিয়ে আবার যানবাহন আটকে যায় যানজটে। সেখানে তিন মাথায় একইভাবে ত্রিমুখী যানজটে আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। পুলিশের ভাষ্যমতে, এশিয়ান হাইওয়ের দিকে (কাঞ্চন হয়ে গাজীপুর) চলতে গিয়ে ট্রাকের চাপ থাকে এখানে। সে কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানেও পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চেয়ে ট্রাক দাঁড় করানোতে ব্যস্ত থাকে। এই ফাঁকে বিশৃঙ্খলভাবে চলতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনে রাতে সৃষ্ট এ যানজট কখনও কখনও এক ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী হয়।
মহাসড়কের সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক স্থানের নাম মেঘনা সেতু। এমন কোনো দিন নেই যে মেঘনা সেতুতে যানজটের ভোগান্তি নেই। ভুক্তভোগিদের মতে, পুলিশ একটিভ থাকলে সেতুর দু’দিকেই যানজট ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। কিন্তু পুলিশ দায়িত্বশীল থাকে না বলেই সকাল বিকাল রাতে একাধারে যানজট লেগে থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের আরামদায়ক ভ্রমণের সব সাফল্য এখানে এসে ম্লান হয়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল মালেক জানান, অতিরিক্ত মালবাহী যানগুলো সেতুতে ওঠার সময় খুব ধীর গতিতে ওঠে। কোনো কোনো যান আবার সেতুতে উঠতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। তখন দুই দিকের যানবাহন বন্ধ করে রেকার উঠিয়ে বিকল হওয়া যানবাহনের সরানোর ব্যবস্থা করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৩০ মিনিট সময়ও যদি লাগে তাতে সেতুর দুই দিকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হওয়া স্বাভাবিক। সেতুতে উঠতে গিয়ে কেনো এতো যানবাহন বিকল হয় এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ যানবাহনই অতিরিক্ত মাল বহন করে। সেতুতে উঠতে গিয়ে বেশি শক্তি ব্যয় হওয়ায় ইঞ্জিন ফেল করে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো বিকল হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলোও হয়। হয় বলেই তো যানজট হয়। হাইওয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, নতুন করে সেতু নির্মাণ না করা পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কের সুফল সেভাবে আর আসবে না। একই সাথে এই যন্ত্রণা থেকেও আপাতত রেহাই মিলবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।