বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যশোর স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা স্থলে মানুষের উপস্থিতি উপছে পড়েছে। সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছে জনসভাস্থলে। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই আগমনকে ঘিরে তার কাছে দীর্ঘদিনের তিন দাবির কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তা হলো- যশোর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা এবং যশোর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকে রূপান্তর করা ও ৫০০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
যশোর শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কথা বলে উঠে এসেছে আরো কিছু দাবি। সেগুলো- যশোরকে বিভাগ করা, ভৈরব নদ সংস্কার, ভবদহে জোয়ারাধার চালুসহ আরও কিছু দাবিও রয়েছে তাদের।
যশোরের শিক্ষার্থী হৃদয় হোসেন বলেন, পৌরসভাটি সিটি করপোরেশন হলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এটি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
প্রবাসী জুয়েল খান বলেন, এ অঞ্চলের অনেক মানুষ বিদেশে প্রবাস জীবনে আছে। আকাশপথে দেশের বাইরে যেতে হলে রাজধানী ঢাকা হয়ে যেতে হয়। এমতাবস্থায় যশোর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক করা হলে এসব মানুষ উপকৃত হবে।
যশোর শহরের ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, যশোর হাসপাতাল ৫০০ শয্যা করা সময়ের দাবী। অনেকে চিকিৎসা পাবে, সংকট দূর হবে। আর সিটি করপোরেশন হলে অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
জাসদের কার্যকরি কমিটির সভাপতি ও আইনজীবী রবিউল আলম বলেন, এই মুহূর্তে যশোর মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা করা, ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। আর যশোর বিভাগ হলে স্বাভাবিকভাবেই পৌরসভাটি সিটি কর্পোরেশন হয়ে যাবে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক করা, হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা, যশোর ও আশেপাশের ১০ কিলোমিটারের রাস্তাগুলো চার লেনে উন্নীত করা এবং পুরানো ম্যাপ অনুযায়ী ভৈরব নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ‘জরুরিভিত্তিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং জীবন্ত ভৈরব নদ চাই। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলে ভালো হয়।’
যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর পর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যশোরবাসীকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজ দিয়েছেন, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক দিয়েছেন, ভৈরব নদ খনন শুরু করেছেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কামলা সেতু করে দিয়েছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের কিছু প্রাপ্তি বাকি আছে। তিনি আরো উপহার দেবেন বলে আমরা আশা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, তিনি যেন যশোরকে সিটি করপোরেশন করে দেন। আমাদের আরেকটি দাবি, মেডিক্যাল কলেজের সাথে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে দেওয়া। যশোর বিমানবন্দরটি অত্যন্ত পুরোনো। আমাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করে দেবেন। তিনি সব সময় আমাদের দক্ষিণবঙ্গের মানুষের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। আমরা তার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’
প্রসঙ্গত, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ যশোর, যা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ২৪০ বছর আগে, ১৭৮১ সালে। যশোর পৌরসভা হয়েছে ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট, তাও ১৫৭ বছর আগে। সেই সময়ের যশোর পৌর সমিতি স্বাধীনতার পর পৌরসভার মর্যাদা পায়। ইতিহাসের সাক্ষী এই পৌর শহর ১৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার, লোকসংখ্যা ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৪।
ব্রিটিশরা ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ালে যশোরে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, ছয় মাসের মধ্যে সেটি চালু হয়। ঘাঁটিটি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সচল ছিল। ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাকিস্তান স্বাধীন হলে ১৯৫০ সালে যশোরে ফের বিমানঘাঁটি স্থাপন করে। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালে যশোরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা চালু হয় ১৯৬০ সালে। সেটিই যশোর বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।