Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিত্রাং-এ ভর করে প্রবল বর্ষনের পরে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে

জনস্বাস্থ্য ও কৃষিতে বিপর্যয়ের আশংকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম

অগ্রহায়নের শেষ রাত থেকে সকাল পেরিয়ে মেঘনা অববাহিকা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারী কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ নামছে। দক্ষিণাঞ্চলে এ মৌসুমে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রার পরদ ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছে। বরিশালে রেকর্ডকৃত এ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের ৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে। তবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিক ২৯.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যেই রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পরে দক্ষিণাঞ্চলের দড়জায় শীত কড়া নাড়তে শুরু করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই। কার্তিকের শেষ ভাগেই তাপমাত্রা ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করে। ৮ নভেম্বর বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। যা ছিল স্বাভাবিকের দশমিক ৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে তা কিছুটা ওপরে উঠলেও এখন তা আবার নামছে। ফলে দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ ব্যধীর প্রকোপ বাড়ছে। এ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতেও শিশু ও বয়োজেষ্ঠ রোগীদের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে।
এবার বছর যুড়ে বৃষ্টিপাতের আকালের পরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৫০% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। যা আগের মাসে ছিল স্বাভাবিকের ৬.৬% বেশী। অথচ চলতি বছরের শুরু থেকে আগষ্ট পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলই স্বাভাবিক বৃষ্টির মুখ দেখেনি। ফলে আমন আবাদ ব্যাহত হবার পাশাপাশি আউশের আবাদ ও উৎপাদনও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। আবার শীত আগেভাগে জেঁকে বসার সাথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলাও কোল্ড ইনজুরির কবলে পড়ার আশংকায় ভুগছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ৩৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও অক্টোবরে স্বাভাবিক ১৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বরিশালে ৪৪১ মিলি বৃষ্টিপাতের কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ । অথচ দক্ষিণ উপক’ল থেকে বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিয়েছে গত ২০ অক্টোবর। কিন্তু সিত্রাং-এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা উপক’লভাগে ধেয়ে এসে প্রবল বর্ষণে ভাসিয়ে দেয় বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল ।
এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে যেমনি বিভিন্ন ফসল আবাদ ও উৎপাদন ব্যহত হয়, তেমনি শেষভাগে প্রবল বর্ষনেও আমন ও রবি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়ার এ তারতম্য দক্ষিণাঞ্চলে জনস্বাস্থ্য সহ কৃষি ব্যবস্থায়ও বিরূপ প্রভাব ফেলার আশংকা বৃদ্ধি করছে। গত মে মাসের ঘূর্নিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবেও এ অঞ্চলে আউশ ও তরমুজের সাথে গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আগেই সিত্রাং দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনেরও ক্ষতি করেছে। তবে আমনের জমি থেকে দ্রুত পানি সরে গেলেও এ অঞ্চলের শীতকালীন সবজির পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। প্রবল বর্ষনে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও এক বর্গ ইঞ্চি ফসলী জমিও প্লাবন মূক্ত ছিল না।
গত এপ্রিলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটরের স্থলে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম। মে মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম বৃষ্টি হয়েছে । অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুনে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি। কিন্তু ঐ মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪৫% কম, ২৬৮.৫ মিলিমিটার। জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম বৃষ্টিপাতের পরে আগষ্টেও বরিশালে স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম বৃষ্টি হয়েছে। ঐ মাসে বরিশালে ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৩৬২ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
মৌসুমের প্রায় পুরেটা যুড়ে অনাবৃষ্টির পরে গত মাসে প্রবল বর্ষণ ফসল সহ স্বাভাবিক জনজীবনে ভয়অবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এবার তাপমাত্রার পারদ আগে ভাগেই স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় সামনে কি পরিস্থতি সৃষ্টি হয়, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগনও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ