পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু (নওগাঁর নামাজগড় থেকে ফিরে) : ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া চারিদিক। এর সাথে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হাড়ে কাঁপন ধরানো হিমেল হাওয়া। তাপমাত্রা নেমেছে এককের ঘরে। সব মিলিয়ে বলা যায় বিরূপ প্রকৃতি। এমন অবস্থায় সকাল বেলা নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ খুব একটা আসতে চান না। এমনি বিরূপ প্রকৃতির মাঝে উত্তরের সোনালী ধানের ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় বসেছিল আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগরদের মিলনমেলা। দিনটাও ছিল বারো রবিউল আওয়াল। বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জন্মদিন। এদিন আল্লাহপাক তার পেয়ারা হাবিব বিশ্ব নবী (সা:)কে বিশ্ব জগতের রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন।
নওগাঁর বিজিবি ক্যাম্প লাগোয়া নামাজগড় গাউসুল আযম কামিল মাদ্রাসা। সাড়ে তিনযুগ ধরে আল কোরআনের আলো ঘরে ঘরে জ্বালোর ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ১৯৫১ সালে ছোট স্থাপনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও অনেক চড়াই উৎড়ায় পেরিয়ে ঘাত প্রতিঘাত সামলে আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। তবে এর চলার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। এর প্রাণ পুরুষ মওলানা আব্দুস ছাত্তার আর তার সঙ্গীদের সইতে হয়েছে অনেক নির্যাতন হুমকি ধামকি। এমনকি রোষানলে পড়ে কারাবাস। আল্লাহর রহমতে সব বাধা বিঘœ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। এ অঞ্চলের সব মানুষের কাছে আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর মওলানা আব্দুস সাত্তার অধিষ্ঠিত হয়েছেন নিজ কর্মগুনে অনন্য উচ্চতায়। এ অঞ্চলের আলেম ওলামা সাধারণ মানুষ তাকে হুজুর বলে সম্মান করে। সময়ের প্রয়োজনে সেই হুজুর গত বারো রবিউল আওয়াল ডাক দিয়েছিলেন এখানকার আলেম ওলামা-মাশায়েখ মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী নিকাহ রেজিস্ট্রার ইমামদের। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের একমাত্র অরাজনৈতিক বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নওগাঁ জেলা সভাপতি। এ সময় তিনি বলেন, যারা এদেশে ইসলামের বিস্তার চায় না। আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা মাদ্রাসাকে জঙ্গিবাদের কারখানা বলে মতলবী প্রচারণা চালায়। মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গায়ে নোংরা কালিমা লাগাতে চায়। তাদের এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করতে সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। বিষয় ছিল ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে মাদরাসা শিক্ষকদের করণীয়’। এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রাণ পুরুষ দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিচক্ষণ মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহম্মেদ মোমতাজীসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দকে। তারাও এ জ্ঞান তাপসের আহ্বান উপক্ষো করতে পারেননি। বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও ছুটে এসেছিলেন। আর নওগাঁর এগারো উপজেলার হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী তার ডাকে সমবেত হয়েছিলেন নামাজগড় গাওসুল আজম কামিল মাদ্রাসা মাঠে। সকাল দশটার মধ্যে কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল পুরো মাঠ। কয়েক হাজার মানুষের কণ্ঠে ছিল নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর ধ্বনি। এত মানুষের উপস্থিতি তবু নেই কোন বিশৃঙ্খলা হৈ চৈ। সবাই চুপচাপ বসে সমাবেশে অতিথিদের বক্তব্য শুনেছে। দাবী দাওয়ার ব্যাপারে নীরবে সিøপ পাঠিয়েছে নেতৃবৃন্দের কাছে। বক্তাদের বক্তব্য শুনে মারহাবা আর তাদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল ঘটে যাওয়ায় বলে উঠেছে আলহামদুলিল্লাহ। সবার মনোসংযোগ ছিল জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রাণ পুরুষ এ এম এম বাহাউদ্দীনের দিকে। বক্তব্য দেবার জন্য মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালে নারায়ে তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয় চারিদিক। এরপর তিনি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বক্তব্য আন্তর্জাতিক ও দেশের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করে বলেন জাতির হাজার বছরের মনস্তত্ত্ব এবং মনোপদ্ধতি সাক্ষ্যদেয় আধুনিক বাংলাদেশের মূলধারা ধ্বংস নয় গঠনের। ভেসে যাওয়া নয় স্থির হওয়ার হারিয়ে যাবার নয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার। যেহেতু বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ এর ভেতর থেকে যে শক্তি বা কর্মোদ্যোগ উত্থিত হবে তা চূড়ান্ত বিচারে হবে ইসলামী ভাবধারায়সঞ্জাত। আগামী দিনের বাংলাদেশ আদি অকৃত্রিম ইসলামের। উদার সহনশীল মানবতাবাদী মুসলমানের এ দেশটি হবে বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় মডেল একটি আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র। এ গন্তব্য বাংলাদেশের জন্য অবধারিত। আর যার নেতৃত্বে থাকবে এদেশের আলেম ওলামা মাশায়েখরা। দ্রুত বদলে যাওয়ার বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোকপাত করেন। তিনি আটোমান সাম্রাজ্য ও বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেন। তার এসব বক্তব্য মন্ত্র মুগ্ধের মত শোনেন উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ গড়ার কারিগর।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বির আহম্মেদ মোমতাজী তার স্বভাব সুলভ দরাজ কণ্ঠে মাদ্রাসা শিক্ষকদের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ, জমিয়ত কি করছে। কি ছিল আর কি হয়েছে। আর কি চাই। প্রাপ্তি আর আগামী দিনে বাস্তবায়ন হবে এমন সব বিষয় তুলে ধরেন উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে। অনেক দাবীর মধ্যে অন্যতম ছিল তাদের চাকরির জাতীয়করণ। আর দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা মাদ্রাসা কোন জঙ্গি তৈরীর কারখানা নয়। এখানে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। হবেও না।
আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। নওগার তরুণ সহকারী পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার এসেছিলেন অতিথি হয়ে। সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপর নির্যাতন, জঙ্গিবাদ নিয়ে চমৎকার বক্তব্য দিয়ে প্রশংসার অংশীদার হন।
শেষে সমাবেশের সভাপতি মওলানা আব্দুল ছাত্তার ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ করে আল্লাহর দরবারে সবার মঙ্গল কামনা ও দেশের উন্নতির জন্য মোনাজাত করেন। হাজার হাজার মানুষের দুপুরের খাবার নিয়েও ছিল না এতটুকু বিশৃঙ্খলা। এই সফল সমাবেশ করতে গিয়ে কম ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়নি আয়োজকদের। ছিল মহল বিশেষের ভিন্ন রকম প্রচ্ছন্ন চাপ। এরমধ্যে আগেরদিন বাস শ্রমিকদের বিরোধের জের ধরে জেলার মধ্যে ডাকা হয় পরিবহন ধর্মঘট। বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাবেশে আসা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ভর করে। এর সাথে আবহাওয়ায় বিরুপতা। এসব বাধা-বিপত্তি সামলিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ যোগ দিয়ে সমাবেশেকে মিলনমেলায় পরিণত করে। অবশ্য দুপুরের কুয়াশার চাদর ফুটে হেসে উঠেছিল সূর্য্য। সফল সমাবেশ শেষে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির তৃপ্ত আশাবাদী মন নিয়ে সবাই নির্বিঘেœ নিজ ঘরে ফেরেন। সমাবেশ শেষ হলেও এর রেশ থাকবে বহুদিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।