Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শতভাগ বিদ্যুতায়িত দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় ২৪ লাখ গ্রাহকের ঘর আলোকিত করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪৪ এএম

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধিভুক্ত ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৪ লাখ গ্রাহকের ঘর আলোকিত করার মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে গত কয়েক বছরেই প্রায় ১০ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার ৪ হাজার ৭৭২টি গ্রামের শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবি। ফলে নিকট অতীতে সন্ধার পরে ঘুমিয়ে পড়া গ্রামঞ্চল এখন গভীর রাত পর্যন্ত সাধারন মানুষের পদচারনায় মুখর থাকছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে নানামুখি কুটির শিল্পও গড়ে উঠছে পল্লী এলাকায়। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। কৃষির পাশাপাশি নানামুখি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গ্রামঞ্চলে বেকার সমস্যাও অনেকাংশে লাঘব করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। এমনকি নদ-নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের দূর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলেও নদী তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। তবে মূল সাব-স্টেশন থেকে ৩৩ কেভী, ১১ কেভী ও .০৪ কেভী লাইনের মাধ্যমে সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছে দেয়ার পরেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গড় সিষ্টেম লস ১০%-এরও নিচে।

ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, কুয়েত উন্নয়ন তহবিল,জাপান উন্নয়ন সংস্থা ও মার্কিন সাহায্য সংস্থা সহ কয়েকটি দাতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সারাদেশে এপর্যন্ত প্রায় ২ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সবিধা পৌছে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। বোর্ডের আওতাধীন ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এখন গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবারহ ও বিতরন ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে। যার প্রায় ২৪ লাখ গ্রাহকই দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায়। আগামী জুনের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ২৫ লাখ অতিক্রমের সম্ভবনা রয়েছে।

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ধারনা ও প্রচেষ্টায় ১৯৭৭ সালে গঠিত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ঐ বছরই ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিÑ১’এর কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের সূচনা করে। সেখান থেকে এখন সারা দেশের পল্লী এলাকায় প্রায় দুই কোটি গ্রাহকের ঘর আলোকিত করেছে ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

দক্ষিণাঞ্চলে ১৯৮২ সালের ৮ মে সর্ব প্রথম পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার পরিচালন কার্যক্রম শুরু করে। সে থেকে ক্রমান্বয়ে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২ এবং পটুয়াখালী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, ভোলা ও ঝালকাঠী জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ইতোমধ্যে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং এলটি সহ ৫৭ হাজার কিলোমিটার লাইনের সাহায্যে প্রায় ৩৮৫টি ইউনিয়নের ৫ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহ করছে সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। এ অঞ্চলের প্রায় ২৪ লাখ গ্রাহকের জন্য ৯৫৭ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭০ টি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে পীক আওয়ারে গ্রাহকদের কাছে ৪৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো।
তবে সেচ, বানিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকের অভাবে আবাসিক গ্রাহক নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো মুনফা অর্জন করতে না পরায় আর্থিক ভীত যথেষ্ঠ নড়বড়ে। সরকারী নির্দেশনার আলোকে দেশের মুনফা অর্জনকারী সমিতিগুলোর কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ববধানে অর্থিক ভতর্’কিতে এসব লোকাশানী সমিতিগুলোর পরিচালন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এমনকি এ অঞ্চলের ২৪ লাখ গ্রাহকের ২১ লাখ ২০ হাজারই আবাসিক। এসব আবাসিক গ্রাহককে সমিতিগুলো বিদ্যুৎ সরবারহ করছে অনেকটা পাইকারী ক্রয় মূল্যেই। ফলে মুনফা দুরের কথা অব্যাহত লোকশানেই সমিতিগুলোর পরিচালন ব্যবস্থা ধরে রাখতে হচ্ছে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সেচ গ্রাহকের সংখ্যা দেড় হাজারেরও কম। শিল্প গ্রাহকের সংখ্যাও হাতে গোনা। বানিজ্যিক সহ অন্যান্য গ্রাহকের সংখ্যা ২ লাখের কিছু বেশী। ফলে এসব সমিতি যুগের পর যুগ লাভের মুখ দেখছে না।

কিন্তু সরকারী নীতিমালার আলোকে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিই বছরের পর বছর লোকশান গুনে ২৪ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরনে দক্ষিণাঞ্চলে আরো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পাশপাশি কৃষি-সেচ ব্যাবস্থাও বিদ্যুতায়নে গুরুত্বারোপ করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিবীদগন। ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, লাগাতার লোকাশানী সমিতিগুলোর অস্তিত্ব রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠার পাশাপপাশি কৃষি-সেচ ব্যবস্থাকে বিদ্যুতায়নের বিকল্প নেই।

কৃষি সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ২০০২-০৩ সাল থেকে সরকার ২০% ভত’র্কি প্রদান করে আসলেও বিষয়টি এ অঞ্চলের বেশীরভাগ কৃষকেরই অজানা। এমনকি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজার ও পল্লী বিদ্যুতের তরফ থেকেও কৃষক ও কৃষিজীবীদের বিষয়টি অবহিত না করায় এ অঞ্চলের কৃষি সেচ গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে না কলেও অভিযোগ ওয়াকিবাহল মহলের।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরনে অব্যাহত লোকাশানের মধ্যেও সরকার নিজস্ব তহবিলে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিতরন ব্যাবস্থা আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন’ শির্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ১ হাজার ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পটির বা¯তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বরিশাল অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ