Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্রহ্মপুত্রে তীব্র ভাঙন

উলিপুরে স্থাপনা, ফসলি জমি নদীগর্ভে, বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুহারা হাজারো পরিবার

হাফিজুর রহমান সেলিম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বাস্তুহারা হয়ে পরেছে অনেক পরিবার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাটে ব্রহ্মপুত্রের আগ্রাসনে বাস্তুহারা হয়েছে ওই এলাকার অন্তত দের হাজার মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েক শত পরিবার। এছাড়াও কড্ডার মোড়সহ ঐ এলাকার শতাধিক বাড়ি-ঘর ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। হুমকির মুখে পরেছে কয়কটি স্থাপনা ও ফসলি জমি। বিলীনের অপেক্ষায় মোল্লারহাট বাজার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত বর্ষায় বাজার রক্ষায় কিছু জিওব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা খরস্রোতে নদের গর্ভে চলে গেছে। তীব্র ভাঙন চললেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে বাজারের কাছেই ইতোপূর্বে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করায় এতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে মোল্লারহাট সংলগ্ন রসুলপুর ও ভূগোলের কুটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের তীরে ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙনের তান্ডবে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা, আবাদি জমি, কবরস্থান গিলে ফেলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। আরো অনেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়ি-ঘর।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ছয়বার বাড়ি সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আরমান আলী। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি বাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। আরমান আলী বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাই, বুকের ভেতরাটা ভাঙি যায়। এতোবার ভিটা ভাঙে, তাও কাইয়ো শোনে না, দেখেও না, আমরা খুব অসহায়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে একই কথা বললেন, ঐ এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মুজিবর রহমান। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সর্বহারা হয়ে এখন ফকির হতে হয়েছে অনেককে। বাড়িঘর সরাতে সরাতে হাফসি গেছে বললেন এরশাদুল, আব্দুল খালেক, পাষাণ, সোনাউল্লা, রুবেল, মজিবর, সেকেন্দার, সোহাগসহ ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ছয় মাসে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত দের হাজার একর।
ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘গত ছয় মাসে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে অন্তত ১ হাজার ৩০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যদিকে ধরলা নদীর ভাঙনে মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে ইউনিয়নটি মানোচিত্র হারাবে।
এদিকে গত বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে মোল্লারহাট বাজার রক্ষার্থে ভাঙন রোধে কিছু কাজ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসার জানান, বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। মোল্লাহাট বাজার রক্ষায় ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন জানান, মোল্লাহাট বাজারের ভাঙন রোধের কাজ চলমান। পাশের এলাকার ভাঙন রোধের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয় আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ