বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্বাধিনতার ৫০ বছর পরেও দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জনগনের জানমাল রক্ষায় পরিপূর্ণ প্রস্তুত নয়। গত ৫১ বছরে খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত ২য় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার সাথে বছর দুয়েক আগে নগরীর কাশীপুরে আরেকটি নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। তবে রূপাতলীতে অপর একটি প্রথম শ্রেণীর দমকল কেন্দ্র আইনী জটিলতায় আটকে আছে। এখনো বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচারকের দপ্তর এবং ওয়ার্কসপ ছাড়াও ফায়ার ট্রেনিং ইনস্টিউট স্থাপনের বিষয়গুলো আলোর মুখ দেখেনি।
পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকট সহ অবকাঠামোর দূর্বল অবস্থা সঠিক সেবা প্রদানকে বাধাগ্রস্থ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি প্রথম শ্রেণী ও ৩৫ টি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন ছাড়াও দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে মোট মঞ্জুরীকৃত প্রায় ৯৭৫ জনবলের মধ্যে দুশতাধিক পদেই কোন জনবল নেই। কতৃপক্ষের মতে, জনবল নিয়োগ একটি নিয়মিত ও চলমান প্রক্রিয়া। অদুর ভবিষ্যতেই এ সংকট বাহুলাংশে কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল।
তবে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জানমাল ছাড়াও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিশাল সম্পদ রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করলেও জনবল সংকট সহ নানামুখি সমস্যায় জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্খিত সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি এখনো পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের মত অতি জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্ষকাতর প্রতিষ্ঠান সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি উপজেলায় দমকল বাহিনী পৌছতে পারেনি। আর পুরো বিভাগের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি এ্যাম্বুলেন্সের বেশীরভাগই বিকল। এমনকি নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের দুুটি রিভার ফায়ার স্টেশনের নৌ এ্যাম্বুলেন্স বিকল গত দুই দশক ধরে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ডুবুরী আছেন মাত্র ৩জন। পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনে কোন ডুবুরী নেই। অথচ প্রতিটি জেলায় ৬জন ডুবুরী সহ একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত রয়েছে। খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরের একমাত্র রিভার ফায়ার স্টেশনে এখনো ৩০ বছরের পুরোনা অগ্নি নির্বাপন নৌযানটি চলছে যোড়াতালি দিয়ে।
প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে প্রায় সাড়ে ৫শ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৩০Ñ৪০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও দমকল বাহিনীর প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক জীবনের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার সম্পদও রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু এরপরেও অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্খিত উন্নয়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। এমনকি এ অঞ্চলে শত শত সড়ক দূর্ঘটনা পরবর্তি হতাহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছেন। গত বছর সড়ক দূর্ঘটনায় শতাধিক নিহত ও আরো প্রায় ৫ শত যাত্রী ও পরিবহন কর্মী সহ আহত সাধারন পথচারী উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে দমকল বাহিনী। এমনকি দূর্ঘটনার পর পরই সড়কÑমহাসড়ক সচল রাখতেও দমকল বাহিনী যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
তবে এখনো বরিশালের আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালীর দুমকি ও রংগাবালীতে দমকল বাহিনী পৌছতে পরেনি। মুলাদীর ফায়ার স্টেশনটির নির্মান কাজ শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার স্টেশন সহ দমকল বাহিনীর সব স্থাপনারই অত্যন্ত করুন হাল। বেশীরভাগ ফায়ার স্টেশনের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছে না তহবিল সংকটে। এমনকি নানামুখি সীমাবদ্ধতায় সামান্য মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনও ব্যাহত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে বেশীরভাগ ফায়ার স্টেশনের অবকাঠামোর অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে।
অপরদিকে বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পরে বরিশালে ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় দপ্তর সহ সরঞ্জাম মেরামত কারখানা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভ’মি অধিগ্রহন হলেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন খুব অগ্রগতি নেই। দেশের সব বিভাগীয় সদরে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বরিশালের দপদপিয়া এলাকায় ভ’মি অধিগ্রহনের পরে চলতি অর্থ বছরে সীমানা প্রাচীর নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলেও অবকাঠামো নির্মনের কোনা ‘প্রকল্প-সারপত্র’ই তৈরী হয়নি এখনো। আর নগরীর রূপাতলী এলাকায় একটি প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন নির্মান প্রক্রিয়াই আটকে আছে আইনী জটিলতায়। গত ৫বছরেরও বেশী সময় ধরে বিষয়টি নিয়ে নি¤œ ও উচ্চ আদালতের পরে এখন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
তবে ১৯৫০-এর দিকে বরিশাল শহরে দ্বিতীয় শ্রেণীর একমাত্র ফায়ার স্টেশনটি বছর কয়েক আগে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হলেও এখনো অনেক উন্নত ও আধুনিক ফায়ার ফাইটার ইকুপমেন্ট-এর অভাব রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের বেশীরভাগের জন্য দায়ী বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এড়াতে সব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা সহ আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ লাইন ও সবধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বিষয়ে অধিকতর মনযোগী হবার পরামর্শ ফায়ার সার্ভিসের।
তবে জনবল সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা সহ অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ বিষয়গুরো নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ্য করে দিক নির্দেশনা প্রদানেরও তাগিদ রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলের।
এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসও সিভিল ডিফেন্স-এর বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার ও উপজেলায় দমকল বাহিনীর উন্নয়নে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভাগীয় দপ্তরের ভ’মি উন্নয়নের কাজ খুব শিঘ্্রই শুরুর হবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।