Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা নিয়ে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে দেশের সর্ববৃহৎ নৌযান

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৪ পিএম

নৌপথে ব্যবসায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ লোকসানের মধ্যেই বরিশাল-ঢাকা নৌপথে বুধবার বাণিজ্যিক পরিচালনে যুক্ত হল দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারী যাত্রীবাহী নৌযান, ‘এমভি সুন্দরবন-১৬’। প্রায় ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থ এ নৌযানটির অনুমোদিত যাত্রী বহন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ১২শ। প্রশস্ত ডেক ছাড়াও অত্যন্ত বিলাসবহুল ও আরামদায়ক প্রথম শ্রেণী থেকে ভিআইপি কক্ষে যাত্রীদের তিন তারকা মানের সেবা প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে নৌযানটির পরিচালন প্রতিষ্ঠান।

গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পরে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর নৌপথে যাত্রী পরিবহন আশংকাজনক ভাবে হ্রাসের মধ্যে এ আঞ্চলিক নৌপথে প্রায় দেড়শ যাত্রীবাহী নৌযানের অর্ধেকেরও বেশী বন্ধের পথে। শুধু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে প্রায় ২৫টি নৌযানের রুটপরমিট থাকলেও মালিক সমিতি রোটেশন করে প্রতিদিন উভয়প্রান্ত থেকে ৩টি করে মাত্র ৬টি নৌযান পরিচালন করছে। বেসরকারী নৌযান মালিকদের মতে, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে, জ্বালানী ব্যায়ও উঠছিল না। চরম অনিশ্চয়তার মুখে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-বাণিজ্যে ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।

রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি করোনা মহামারী শুরু হবার আগেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র অভ্যন্তরীণ স্টিমার সার্ভিস অনিয়মিতভাবে চালালেও ইতোমধ্যে তা অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌছার প্রতিযোগীতায় সড়ক পথে মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ দীর্ঘতর হতে শুরু করায় অতি সম্প্রতি অনেক যাত্রীই আবার নৌপথ মুখি হতে শুরু করেছেন। এতে করে নৌযান মালিকগন আবার কিঞ্চিত আশার আলো দেখলেও এখনো লোকসানের বোঝা নিয়েই যাত্রীবাহী নৌযান চলছে।

তবে এ অবস্থার মধ্যেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশন সদ্য নির্মিত বিলাসবহুল ‘এমভি সুন্দরবন-১৬’ নদীতে ভাসাল। বুধবার আসর বাদ বরিশাল নৌ বন্দরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে নৌযানটির বাণিজ্যিক পরিচালন সাফল্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের রহমত কামনা করা হয়। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী নৌযানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। পদ্মা সেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীগন সুলভ নৌপথ ছেড়ে সড়কপথে বরিশাল থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টায় এবং পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা থেকে যথাক্রমে সাড়ে ৪ ও ৬ ঘন্টায় ঢাকায় পৌছছেন। ফলে দেড়শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-বাণিজ্যে চরম খড়ার মুখে একে একে নৌ রুট প্রায় বন্ধের পথে। পাশাপাশি জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি নৌ বাণিজ্যকে আরেক দফা বিপর্যয়ে ঠেলে দিয়েছে।

তবে আশার কথা গত মাসখানেক ধরে নৌপথে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। কিন্তু এরপরেও পরিচালন মুনফায় ফেরেনি ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-পটুয়াখালী সহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌ রুটগুলো। এরইমধ্যে সুন্দরবন নেভিগেশন ‘এমভি সুন্দরবন-১৫’ ও ‘এমভি সুন্দরবন-১৬’ নদীতে ভাসাল। পাশাপাশি নৌ বাণিজ্যে নতুন উদ্যোক্তা ‘এম খান নেভিগেশন’ও একটি বড় মাপের নৌযান নির্মাণ করছে।

শতাধিক কোটি টাকা বিনিয়োগের এ ৩টি নৌযান বরিশাল-ঢাকা নৌপথে আরো আরামদায়ক ও নিরাপদ নৌ ভ্রমণ নিশ্চিত করেই যাত্রী সেবা প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাগন। এ ব্যাপারে সুন্দর নেভিগেশনের চেয়ারম্যান ও বরিশাল চেম্বারের সভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমরা নতুন দুটি নৌযান যাত্রী সেবায় নিয়োজিত করছি। যাত্রী সংকটের মধ্যেও যারা নিরাপদ ও উন্নত যাত্রী সেবা প্রদান করবে তারাই কেবল টিকে থাকবে বলেও জানান তিনি। সাঈদুর রহমান দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর নৌ বাণিজ্য দেড়শত বছরের পুরনো বলে অবিহিত করে এত সহজে তা হারিয়ে যাবেনা বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মানুষ নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণের জন্য নৌপথকেই নির্ভরযোগ্য মন করে বলেও দাবী করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ