নীলফামারীর তিস্তা নদীর পাড়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে তৃতীয় পর্বে ১৯০ টি পরিবারের মাঝে ১৯৮১ টি ঢেউটিন এবং বন্যায় নদী ভাঙ্গনে দুস্থ পরিবারের মাঝে ০৬ টি নির্মিত ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) নীলফামারীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ডিমলা উপজেলায় ১১১টি ও জলঢাকা উপজেলায় ৭৩ টি পরিবারের মাঝে ১৯৮১ টি ঢেউটিন এবং ডিমলায় ০২, জলঢাকায় ০৪ টি পরিবারে মোট ০৬টি নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম এ সফর করেন। উল্লেখ্য যে, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ১৮ জুলাই ২০২২ বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে পেরে সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, অসহায় মানুষের পাশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিপদে আপদে অতীতে ছিলো, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা দেশের প্রতিটি দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের প্রথমিক সমস্যা সমাধানে খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক এবং গোখাদ্য দিয়ে সাধ্যমতো সহযোগীতা করার চেষ্টা করেছি।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আমাদের পরিচয় আমরা জনগনের সেবক, আমরা নেতা নই। বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমরা আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে যেভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সালাম পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং সম্ভব্য কিছু সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ডা. শফিকুর রহমানের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আজ এই ঢেউটিন ও নির্মিত ঘরগুলো আপনাদের মাঝে বুঝিয়ে দেয়া হলো।
'দেশে বর্তমানে রাজনীতির নামে লুটপাট চলছে। এদিকে নিত্যপ্রয়োনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারনে সরকারের উপর সবার না বিশ্বাস জন্মেছে। সরকার জনগনকে ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে বিনা অপরাধে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সহ দেশের শীর্ষ আলেমদের বন্দি করে রেখে লুটপাট চালাচ্ছে, তারা কখনো জনগণের বন্ধু হতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দায়বদ্ধতা থেকে আমরা সহায়-সম্বল হারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটি একটি মাননিক, সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজ। জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শবাদী দল হিসেবে সাধ্যানুযায়ী সকল জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। মানবিক দায়িত্বের অংশ হিসেবেই আজ এই ঘরগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হলো। এ জাতীয় সহযোগিতা আমাদের অনুগ্রহ নয়। বরং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকার। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। আগামীর দিনেও যেন রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপামর জনসাধারণের কল্যাণে সবসময় পাশে থাকতে পারি। আল্লাহ যেন এই ঘরগুলোকে শান্তির নীড় হিসেবে কবুল করেন। তিনি অসহায়দের পাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিতরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী জেলা আমীর মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ। জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম ও আনোয়ারুল ইসলাম, ডিমলা উপজেলা আমীর মাওলানা মহিউর রহমান, জলঢাকা উপজেলা আমীর ছাদের হোসেন প্রমুখ।
প্রদান অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান জুয়েল, ডিমলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মুজিবুর রহমান, জলঢাকা উপজেলা সেক্রেটারি কামারুজ্জামান, ডিমলা উপজেলা সেক্রেটারি কাজী হাবিবুর রহমান, জলঢাকা উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি মোয়াম্মার আল হোসাইন, জলঢাকার কর্মপরিষদ সদস্য মুজাহিদ মাসুম, ডিমলার গয়াবাড়ি ইউনিয়ন আমীর কাজী রোনুজ্জামান বকুল, ছাত্রশিবিরের নীলফামারী জেলা সভাপতি মহসীন আলী সহ উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বন্যায় তিস্তা নদী পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ ছাতুনামা ভেন্ডাবাড়ি এলাকায় ০২ টি নির্মিত ঘর এবং ১১১ টি পরিবারের মাঝে ঢেউটিন এবং জলঢাকা উপজেলার কৈমারী বানপাড়া এলাকায় ০৪ টি নির্মিত ঘর ও ৭৩ টি দুস্থ পরিবারের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়।