Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে চার ইউনিয়নের লাখো মানুষ

বন্যায় পিচ ঢালাই সড়ক একাকার

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : রাস্তার দুই ধারে অন্তত ৩৫ ফিট গভীর খাঁদ। তার মাঝ দিয়ে তৈরি হয়েছে পাকা রাস্তা। সে রাস্তাও হারিয়ে গেছে অনেক আগে। প্রবল বন্যায় রাস্তার পাকা উঠে গিয়ে মাঝ খান দিয়ে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাত রাস্তা রয়েছে তাও ঢেউয়ের মত উঁচু নিচু। এই বিপর্যস্ত রাস্তার উপর দিয়েই প্রতিদিন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে জীবন হাতে ঝুঁকি গন্তব্য যাত্রা করে ৩টি থানা এবং ৪টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ। এমনকি এসব এলাকার প্রসূতি মহিলাসহ অসুস্থ কোন ব্যক্তি জরুরী অসুখে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া এখন দায় হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই রাস্তাটি পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করে ২ মাসের মধ্যে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের নির্দেশ দেয়ার প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এ বিষয়ে কোন কার্যকারী উদ্যোগই নিতে পারেনি স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এমন চিত্র গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উধুনিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৪ কি.মি. রাস্তার। জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর বাজার থেকে উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৬ কি.মি. রাস্তা নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। চলনবিলের বুক চিরে এই রাস্তাটি তৈরী হওয়ায় উল্লাপাড়া উপজেলার সাথে পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাংগুড়া, ফরিদপুর থানা এবং উল্লাপাড়ার পশ্চিম অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের লাখো মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার নব দিগন্তের সূচনা করে। বাপ-দাদার আমল থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই জনপদের মানুষ এখান দিয়ে পাকা রাস্তার তৈরীর দাবী জানিয়ে আসছিল। এ দাবীর প্রেক্ষিতে রাস্তাটি তৈরী হওয়ার পর প্রত্যন্ত গ্রামজনপদের মানুষেরা উপজেলা শহর থেকে অন্তত ৩০ কি.মি. দূরে চলনবিলের মধ্য থেকে বাড়ী থেকে যানবাহনে চড়ে শহরে যাতায়েত শুরু করে। কিন্তু এই জনপদের মানুষের ভাগ্য সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চলনবিলের বুক চিরে রাস্তাটি তৈরীর সময় রাস্তার পাশ থেকে বেকো মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলায় দুই পাশে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। একই সাথে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি এবং দুই ধারে সিসি ব্লক না দেয়ায় প্রবল বন্যার ডেউয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তাটি অল্পদিনেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মাঝে স্থানীয়ভাবে সামান্য মেরামত করে রাস্তাটি রক্ষার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। গত ৭ থেকে ৮ বছর হল এই রাস্তাটি দিয়ে যানবাহনে চড়ে মানুষের চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় পুরো রাস্তার পাকা উঠে গেছে। উঁচু রাস্তাটির উপরে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাত রাস্তা বাদে পুরো সড়কের মাথা ভেঙ্গে গেছে। তাই এর উপর দিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হওয়ায় রাস্তার খালের পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ তৈরী করে এখান দিয়েই সাধারন মানুষ পায়ে হাঁটাসহ মোটরসাইকেলে জীবন হাতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করার সময় প্রায়ই রাস্তার পাশে খালে পড়ে সাধারণ মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। রাস্তার পাশে গভীর খালে পড়ে বেশ কয়েক জনের হাত পা ভাঙ্গাসহ মারাত্মক আহত হওয়ার পর স্থানীয় এলাকাবাসী বার বার রাজনৈতিক নেতাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর লিখিত আবেদন করেও রাস্তাটি সংস্কারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারছে না। উপায়ান্ত না দেখে সাধারণ মানুষের চাপের মুখে উধুনিয়া এবং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা রাস্তার মাঝে মাঝে মাটি ফেলে সাময়িক চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। এই রাস্তাটি দিয়ে যখন সাধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে চলাচল করাই দায় সেখানে রাস্তাটি দিয়ে এই জনপদের মানুষের কৃষিপণ্যসহ যাবতীয় মালামাল পরিবহন করতে পারছে না। এ জনপদের মানুষেরা মালামালসহ যাবতীয় পণ্য পরিবহন করছে অন্য উপজেলার দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে। স্থানীয় মিল্ক ভিটায় গো-খামারীরা দুগ্ধ পরিবহনসহ কৃষি পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। যার কারনে যাবতীয় জিনিসের ন্যায্য মূল্যে না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারন মানুষ। এতে স্থানীয় কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সরেজমিনে মঙ্গলবার বিকেলে রাস্তাটি পরিদর্শনের সময় কথা হল উধুনিয়া এলাকার নরেন দাসের স্ত্রী উলি দাসের সাথে। এ সময় তিনি তার বাবার বাড়ী উল্লাপাড়ার সোনতলা গ্রাম থেকে বস্তায় এবং ব্যাগে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভরে নিজে বহন করে পায়ে হেঁটে স্বামী বাড়ি যাচ্ছিলেন। এত ভারী বোঝা নিয়ে পায়ে হেঁটে কোথা থেকে আসছেন জিজ্ঞাস করতেই তিনি জানালেন, বাবার বাড়ীত থাইকা আসতেছি। বিয়ার (বিয়ে) পর থাইকা ২০ বছর এ্যবা হইরাই যাতাযেত করত্যাছি। ২ ছায়ালের (সন্তান) মা হইছি। স্বামীর বাড়ী ম্যালা দুর আসার রাস্তা ভাল লয়, তাই কেউ দ্যাখপার আসেনা। একই কথা জানালেন এই গৃৃহবধূর সাথে উল্লাপাড়া উপজেলা শহর থেকে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে তাদের কোলে করে পায়ে হেঁটে আসা উধুনিয়ার সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী এছমত আরা, নাজমুল হোসেনের স্ত্রী ২ সন্তানের জননী নাসিমা বেগম। তারাও জানালেন রাস্তাটি খারাপ অবস্থার কারণে তাদের নিত্যদিনের চরম দুর্ভোগের কথা। রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী ভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, তিনি এই রাস্তায় ভ্যানে করে মাঝে মধ্যে হালকা মালামাল নিয়ে ৩ থেকে ৪ জন লোক দিয়ে ঠেলে নিয়ে আসেন। রাস্তার পাশে গভীর খাল থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেবল জীবিকার তাগিদে তিনি মাঝে মধ্যে এ রাস্তায় আসেন। ইতিমধ্যে উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম রাস্তাটি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত রাস্তাটি নির্মাণের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। রাস্তাটির সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ নিয়ে বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা হলে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী  আবু হেনা মোস্তফা কামাল এ প্রতিবেদক কে জানান, উল্লাপাড়ার শ্যামলীপাড়া থেকে ভাংগুড়া থানার ময়দানদিঘি বাজার পর্যন্ত ১৬৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ২২ কি.মি. নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেটি আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। সড়ক বিভাগের বিশেজ্ঞরা রাস্তাটি সরেজমিন পরিদর্শন করে মতামত দেয়ার পর আবার নতুন করে প্রকল্প দেয়া হবে। তবে আমরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে অল্প টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ