Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবজি চাষে গৃহবধূ আয়শার মুখে হাসির ঝিলিক

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালু এলাকার গৃহবধূ আয়েশা বেগমের শাক-সবজি চাষে মুখে হাসি ফুটলো। বেড়াইত এলাকার শহিদুল্লাহ গাজীর মেয়ে আয়েশা বেগম ছোট বেলা থেকেই অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়েছে। দারিদ্র্যের মাঝে বড় হওয়া আয়েশা বেগম তার বাবা-মায়ের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। সংসারের অভাব অনটনের কারণে কোন বেশী দূর পড়ালেখা করতে পারেনি। আশেয়া বেগম কোন রকমে মাধ্যমিকের গন্ডিটা পেরিয়েছে। বাবার সামর্থ্য না থাকার কারণে আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি। আয়েশার বাবা অসুস্থ থাকার কারনে ১০ বছর আগে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালু এলাকার শরুবদ্দিন খার ছেলে আফজাল হোসেনের সঙ্গে আয়েশা বেগমের বিয়ে হয়। শশুর বাড়িতে যাওয়ার পরও সেই দারিদ্র্য পিছু ছাড়েনি আয়েশা বেগমের। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তার স্বামী আফজাল হোসেন ঢাকা থেকে শাক-সবজি ও কাঁচামাল কিনে এনে স্থানীয় বড়ালু বাজারে বিক্রি করে। শুধু আফজালের একার আয়ে এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চালানোটা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল। এছাড়া ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে তাদেরকে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছিল। অভাব অনটনের সংসারে প্রায় সময়ই তাদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় দিয়ে ঝগড়া হতো। এক পর্যায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিলো। গত ১ বছর আগে আয়েশা বেগম একটি বেসরকারি এনজিও থেকে শাকসবজি চাষের ৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণে আয়েশা বেগকে লাল শাক, মুলা শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ কুমড়া, ডাটা, ছিম, টমেটো, গাজর, বাঁধা কপি, ফুল কপিসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষসহ এগুলো কিভাবে পরিচর্চা করতে হয় একই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। আয়েশা বেগম প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বহু কষ্টে যোগার করা মাত্র ৩ হাজার  টাকা পুঁজি নিয়ে দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে সে জমিতে লাল লাল শাক, মুলা শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ কুমড়া, ডাটা, ছিম, টমেটো, গাজর, বাঁধা কপি, ফুল কপিসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির চাষ শুরু করেছিলো। প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সঠিকভাবে শাকসবজির যতœ নেয়া শুরু করলে মাত্র অল্প সময়েই তিনি সফলতা লাভ করেন। আয়েশা বেগম শাকসবজির পরিচর্চা করেন আর স্বামী আফজাল হোসেন শাকসবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে। শবজি চাষের মাধ্যমে তাদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে। বাজারে শাকসবজি বিক্রি করে আয়েশা বেগম ও তার স্বামী আফজাল হোসেনের  মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। মাত্র ৩ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন আয়েমা বেগমের বর্তমান মূলধনের পরিমান প্রায় ৮০ হাজার টাকা। স্বামী আফজাল হোসেন জানান, তিনি যখন ঢাকা থেকে কাচাঁমাল ও শাকসবজি নিয়ে এসে স্থানীয় বড়ালু বাজারে বিক্রি করতো। তখন তার সংসার চালাতে অনেকা কষ্ট হতো। যখন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম এনজিও থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে শাকসবজি চাষ শুরু করে তখন আফজাল হোসেন ও তাকে সহযোগিতা করা শুরু করে। তাদের দুজনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তারা সবজি চাষে সফলতার অর্জন করে। আফজাল হোসেনকে এখন আর ঢাকা থেকে কাঁচামাল ও শাকসবজি কিনে আনতে হয় না। তিনি এখন তার জমিতে চাষ করা কাঁচামাল ও শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে। এখন তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। এখন তাদের ছেলেময়েদের লেখাপড়া করাতেও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আয়েশা বেগম বলেন, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে যখন অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। তখন থেকেই আয়েশা বেগম ভাবছিলেন কিভাবে সংসারের আয় বাড়ানো যায়। তখনই আয়েশা জানতে পারলো যে একটি এনজিও বিভিন্ন বিষয়ের উপর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তখন তিনি এনজিও থেকে ৪ দিনের শাকসবজি চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ৩ হাজার টাকা পুজি আর দেড় ভিগা জমি লিজ নিয়ে সে জমিতে লাল শাক, মুলা শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ কুমড়া, ডাটা, ছিম, ভেন্ডি, পটলসহ বিভিন্ন ধরনের কাচাঁমাল ও শাকসবজির চাঁষ করে। তার স্বামী আফজাল হোসেনও তার কাজে অনেক সহযোগিতা করে। আয়েশা বেগম ও আফজার হোসেন তারা দুজনে মিলে শাকসবজির পরিচর্চা করে শুরু করে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তারা সফলতার মুখ দেখে। তাদের সংসারে এখন আর কোন অভাব অনটন নেই। শাকসবজি বিক্রি করে তাদের যা আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার ভাল করেই চলে যায়। সংসার চালানো নিয়ে এখন আর তাদের মধ্যে কোন ধরনের ঝগড়া হয় না। আয়েশা বেগম আরো বলেন, তিনি যদি আরো বেশি পুঁজি ও আরো বেশী জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করতে পারে তাহলে তিনি আরো উন্নতি করতে পারবেন। জীবনে চলতে গেলে সারাজীবন সংগ্রাম করে যেতে হবে। জীবন সংগ্রামে চলতে গেলে অনেক সময় অনেক বাধা আসবে তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। আয়েশা বেগম যদি আরো কিছু জমি লিজ পেত তাহলে তিনি তার সবজি চাষের ব্যবসাকে আরো বাড়াতে পারতো। বড়ালু এলাকার ইউপি সদস্য বলেন, আয়েশা বেগমের মত যদি অন্য নারীরা যদি বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে থেকে যদি কোন কাজ স্বাবলম্বী হতে পারে তাহলে নারীদের আর পুরুষের উপর নির্ভশীল হয়ে থাকতে হবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও সংসার চালাতে অবদান রাখতে পারবে। এমনকি যদি তাদের কোন রকম সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ