বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের একমাত্র স্বনির্ভর খাত লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬৫ হাজার একর লবণ জমিতে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদনে
৩৭ হাজার চাষি আগাম মাঠে নেমেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী অঞ্চলের ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষে নেমেছেন চাষীরা। এরইমধ্যে গত দুই নভেম্বর মৌসুমের প্রথম দফায় মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিক থেকে প্রতিটি মোকামে পুরোদমে লবণ উৎপাদন নিশ্চিত হবে এমনটাই জানিয়েছেন বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া লবণ উৎপাদনের অনুকূলে থাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে লবণ চাষ। এবার মৌসুমের শুরুতেই কক্সবাজারের চকরিয়া
উপজেলার উপকুলীয় অঞ্চল, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী, বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার জমিতে একমাস আগে লবণ চাষ শুরু হয়েছে। চাষিদের আশা, আবহাওয়ার পরিবেশ এ ধরণের থাকলে দেশে এবার চাহিদার বিপরীতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হবে।
গত ২০ অক্টোবর বিসিকের চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান রাজাখালীর প্রান্তিক চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন, বিদেশ থেকে আর লবণ আমদানি করা হবে না। এরপরই চাষিরা আগাম চাষে মাঠে নামেন।
সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে পরপর বেশ কয়েক মৌসুম চাষিরা বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন করেও লোকসান তাদের গুণতে হয়েছে। এবার সবকিছু লবণ উৎপাদন সহায়ক থাকায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
তবে বরাবরের মতো এবারও শিল্প মন্ত্রাণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের কাছে চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হবে মর্মে আগাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র। তাঁরা মুলত দেশে লবণের ঘাটতি দেখিয়ে বিদেশ সোডিয়াম লবণ আমদানির জন্য সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাষিদের দাবি সরকার যেন সিন্ডিকেট চাপের মুখে প্রভাবিত না হয়। দেশে যেভাবে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে তাতে কোনো ঘাটতি থাকার আশঙ্কা নাই।
কক্সবাজার বিসিক সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুতে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন। তবে এবছর একমাস আগে অক্টোবর থেকে মাঠে নেমেছেন চাষীরা। এবার ৩৭ হাজার চাষি লবণ চাষে নিয়োজিত হয়েছেন। মাঠে উৎপাদন কাজে জড়িত থাকে আরো ৭৫ হাজার শ্রমজীবি মানুষ। পরিবহন লোড-আনলোড এবং মিলপর্যায়ে প্যাকেটিং ও বাজারজাত সেক্টর মিলিয়ে দেশীয় লবণ শিল্পে মোট ৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর নিয়োজিত থাকেন । এবছর মোট ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা (আংশিক এলাকা) থেকে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিসিক।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মহেশখালীতে জমি অধিগ্রহণ করায় চলতি মওসুমে ১৫-২০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে না। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ২৫ হাজার প্রান্তিক চাষিও বেকার হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজার জেলা ছাড়া বাঁশখালী উপজেলার কিছু এলাকাতে লবণ উৎপাদন হয়। এ ছাড়া দেশের আর কোথাও লবণ উৎপাদিত হয় না।
কক্সবাজরের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাফর ইকবাল ভুঁইয়া এপ্রঙ্গে বলেন, চলতি মওসুমে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে চাষ শুরু করা হয়েছে। গতবছর জমির পরিমাণ ৬৩ হাজার ২৯১ একর থাকলেও এবছর চাষের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এবার আবহাওয়ার পরিবেশ বেশ ভালো।
তিনি বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর মাসে চাষ শুরু হলেও এবার বিভিন্ন মোকামে একমাস আগে থেকে লবণ চাষে নেমেছেন চাষীরা। এরইমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার মাঠ থেকে মৌসুমের প্রথমদফার লবণ উঠেছে। আশাকরি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরো অঞ্চলে লবণ উৎপাদন পুরোদমে শুরু হবে।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহাব উদ্দিন বলেন, লবণ আমদানি চক্র সুকৌশলে সোডিয়াম সালফেট (মিল-কারখানায় ব্যবহৃত লবণ) নাম দিয়ে দেশে অহরহ নিয়ে আসছে সোডিয়াম কোরাইড তথা খাদ্যলবণ। এসব লবণ তারা আমদানি করে সরাসরি বাজারজাত করছে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমদানি নির্ভর কিছু লবণ মিল মালিক সবসময়ই লবণ আমদানির জন্য অনুমতি পেয়ে থাকেন। তারা চান দেশীয় লবণ শিল্প চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক। বিপরীতে সুফল হিসেবে তাঁরা দেশের টাকা লুটেপুটে খাক ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লবণ চাষিদের অগ্রীম মাঠে নামার জন্য উৎসাহ যোগাতে এবং বেশী পরিমান লবণ উৎপাদন করতে মহেশখালীর হোয়ানকে ৫ হাজার লবণ চাষি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহেশখালী লবণ চাষি কল্যাণ সমিতি এবং বিসিক যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াছিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শরীফ বাদশা, বিসিকের ডিজি এম জাপর ইকবাল ভূঁইয়া ও সিআইপি আব্দুল শুক্কুর লবণ চাষিদের উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এবছরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পায়ঁতারা চলছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় একমাস আগে থেবে লবণ চাষে নেমেছেন চাষীরা। এরইমধ্যে লবণ উৎপাদনও শুরু হয়েছে। কিন্তু কতিপয় সিন্ডিকেটকে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির জন্য অনুমতি দিচ্ছে সরকার এইধরণের খবরে চাষীদের মাঝে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দাবি জানাই সরকারের কাছে, দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচান এই শিল্পে জড়িত পাঁচ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার পথ সচল রাখুন। তার মতে, দেশের লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বিদেশ থেকে আমদানির জন্য প্রতিবছর সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে কমপক্ষে আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে। আশাকরি সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির মতো আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন জনগণের মিলকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।