Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মহাসড়কে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি, নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের দরুন নিত্য দুর্ঘটনা এখনো থেমে নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলা অংশে। গত ৯ ডিসেম্বর গভীর রাতে ও মিরসরাই সদরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হয় ১ জন। আহত হয় ৫ জন। গত ৬ মাসে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয় মিরসরাই-সীতাকুন্ড অংশে। একটি দুঘটনায় সম্প্রতি ৭ জন পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সোনাপাহাড় এলাকায়। এছাড়া এক, দুইজন হরহামেশাই নিহত হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনার জন্য আনফিট লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো অদক্ষ চালকদের দায়ী করছে সচেতন মহল। লক্কড়ঝক্কড় এর তালিকায় এই রুটে সর্বশীর্ষ চট্টগ্রাম বারইয়াহাট রুটের চয়েস সার্ভিস নামক বাস।  চড়া ভাড়া নেয়া সত্ত্বে ও  লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো পরিবর্তনের তোয়াক্কা না করে চলছে এই চয়েস বাস সার্ভিস। যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। আবার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। এ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশসের মেয়র আ জ ম নাছির, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের যুগ্ম শ্রম পরিচালক ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা ও জানা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, চয়েস সার্ভিসের অধিকাংশ গাড়ি অন্য লাইনে আনফিট হয়ে যাবার পর এই রুটে আনা। মোটা অংকের ফ্রি নিয়ে লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো চয়েস লাইনে ভর্তি করা হয়। গাড়িগুলো ছোট ছোট সিটে যাত্রীদের বসতে অসুবিধা হয়। সিটগুলো দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়ম রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে দেড় ঘণ্টার সময় নির্ধারণ করা হলেও চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। চয়েস বাসের নিয়মিত যাত্রী এনজিও কমকর্তা শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী জানান, ছোট ছোট সিটে পা রাখা যায় না। এছাড়া সিটগুলো দুর্গন্ধে ভরা। একাধিকবার গাড়ির চালক ও হেলপারকে বলার পর গাড়িগুলো কোন উন্নতি হয়নি। চট্টগ্রাম থেকে আসা চয়েস বাসের যাত্রী ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান চট্টগ্রাম থেকে এখানে অন্যান্য সকল বাস ৫০ টাকা নিচ্ছে। ভালোমানের যাত্রীসেবা পেতে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে এলাম। অথচ বাসের সংকীর্ণ সীটে পায়ে ব্যথা হয়ে গেছে, আবার ভাঙ্গাচোরা বডি নিয়ে বাসটি কয়েকবারই যেন হুমড়ি খেয়ে রাস্তার বাহিরে যাবার উপক্রম। তিনি আরো বলেন কিছু অসাধু সিন্ডিকেট বিভিন্ন মহলকে হাত করে এই নি¤œমানের ঝুঁকিপূর্ণ সার্ভিস সবাইকে নীরবে সইতে হচ্ছে। অথচ দেশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্থনৈতিকসহ বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাওয়া এই রুটই এখনো পিছিয়ে। এই চয়েস ও উত্তরা পরিবহনগুলোসহ আনফিট সকল গাড়িতে জন ভোগান্তির বিষয়ে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স প্রয়োজন বলে মনে করেন বারইয়াহাটের সচেতন নাগরিক শান্তিনীড় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন সোহেল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান জানান, চয়েস সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কথা তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি গৃহায়ন গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরামর্শে একটি সঠিক সমাধান করবেন। অভিযোগে আরো জানা যায় চট্টগ্রাম ধুম-শুভপুর বাস মিনিবাস সমিতির কমিটিতে ও রয়েছে দ্বন্দ্ব গ্রুপিং এছাড়া পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনছে ও বলে জানা যায়। আবার এছাড়া শুধু চয়েস বাস নয় হিউম্যান হলারগুলোর অদক্ষ চালক, রুটপারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখনো নিত্য চলাচল করছে । লক্কড়ঝক্কড় মার্কা এসব গাড়িগুলোতেই ছোট বড় দুর্ঘটনা প্রবণতা বাড়ানোর কারণ বলে মনে করছে সচেতন মহল। গত ১ বছরে এক সাথে ৫ জন, ৭ জনসহ বেশ অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই চট্টগ্রাম থেকে ফেনী অংশে। দুর্ঘটনা প্রবণতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সবাই সচেতনতার চেষ্টা করলে ও কার্যকর উদ্যোগ এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কারণ এখনো আনফিট সকল শ্রেণীর গাড়িই মহাসড়কে চলছে নিত্য। এদিকে হিউম্যান হলার বা লেগুনা নামের কিছু বাহনের মালিক-শ্রমিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। এসব লেগুনার অধিকাংশ চালকই অদক্ষ ও শিশু-কিশোর। ১২-১৪ বছর বয়সী অনেক শিশুকে ও লেগুনাতে চালক কিংবা চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরিদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন  আমরা আনফিট গাড়ির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে আলোচনা তদারকি বৃদ্ধি করবো শীর্ঘই। ফিটনেস ও কিশোর ড্রাইভারদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিবো শীঘ্রই বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ