যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
ইমামুল হাবীব বাপ্পি : সেই ২০০৮ সাল থেকে ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা হাতবদল হচ্ছে তাদের দুজনের মধ্যে। কখনো উঠেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হাতে, কখনো লিওনেল মেসির। এবারো লড়াইটা হয়েছে এই দুজনের মধ্যেই। গোল ও গোলে সহায়তায় এবারো এগিয়ে ছিলেন মেসি। কিন্তু জাতীয় দল পর্তুগালকে প্রথমবারের মত ইউরো এবং ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতায় এবারের ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন রোনালদো। গেল সোমবার রাতে সুইজারল্যান্ডের নিয়নে সম্পন্ন হল এর আনুষ্ঠানিকতা। অনুমিতভাবেই চতুর্থবারের মত ব্যালন ডি’অরে ভূষিত হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
১৯৫৬ সাল থেকে ‘ব্যালন ডি’অর’ নামে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাঙ্গাজিন দিয়ে আসছে সেরা ফুটবলারের পুরস্কারর। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কার দেওয়া হত শুধুমাত্র ইউরোপ সেরা ফুটবলারকে। এরপর থেকে দেওয়া হত ইউরোপে খেলা যে কোন দেশের খেলোয়াড়কে। আর ২০০৭ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় বিশ্বসেরা বিবেচনায়।
চালু হওয়ার প্রথম বছর এই পুরস্কার জেতেন ইংলিশ রাইট উইঙ্গার স্যার অ্যাশলে ম্যাথিউ। এরপর যুগে যুগে ব্যাল ডি’আর নামের এই শিরোপাটি উঠেছে সময়ের সেরা সব খেলোয়াড়ের হাতে। সবচেয়ে বেশি তিনবার করে এই পুরস্কার জেতেন সাবেক ফরাসি তারকা মিশেল প্ল্যাতিনি (১৯৮৩ থেকে ৮৫), নেদারল্যান্ডস ফরোয়ার্ড ইয়োহান ক্রুইফ (১৯৭১, ১৯৭৩, ১৯৭৪) ও আরেক নেদারল্যান্ডস স্ট্রাইকার মার্কো ভন বাস্তেন (১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯২)। দুইবার করে জেতেন ছয়জন ফুটবলার। তারা হলেনÑ ফ্রেঞ্চ বেকেনবেয়ার (জার্মানি), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল), রোনালদো (ব্রাজিল), আলফ্রেড ডি স্টেফানো (আর্জেন্টিনা/স্পেন), কেভিন নিগান (স্পেন) ও কার্ল-হেনিজ রুমেনিগ (জার্মানি)।
অন্যদিকে ১৯৯১ সালে ফিফা হাতে নেয় বর্ষসেরা ফুটবলারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কার্যক্রম। জার্মানির লুথার ম্যাথিউসের হাতে ওঠে প্রথম সেরার পুরস্কার। সর্বোচ্চ তিনবার করে জেতেন ফরাসি তারকা জিনেদিন জিদান ও রোনালদো (ব্রাজিল)। দুইবার ওঠে রোনালদিনহোর হাতে।
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত যে যার মত দিয়ে আসছিল বিশ্বসেরা ফুটবলারের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এরপর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বছর দুই প্রতিষ্ঠান এক হয়ে য়ায়। তখন ট্রফিটির নাম হয় ফিফা ব্যাল ডি’অর। এই ছয় বছরে কেবল দুইজনের মধ্যেই হাতবদল হয় শিরোপাটি। চারবার ওঠে মেসির হাতে, দুই বার রোনালদোর।
মনে করা হয় সেসময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটার ও উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনির সখ্যতার কারণেই দুই পুরস্কার এক হয়ে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে দেওয়া হত এই পুরস্কার। দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্ল্যাটারের চেয়ারে চলতি বছরের শুরুতে বসেছেন জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। এরপর ফরাসি ফুটবল ম্যাঙ্গাজিনটি ঘোষণা দেয় আর তারা ফিফার সাথে নেই। এখন থেকে আবারো নিজেদের মত করে এই পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। ফিফা আর ব্যালন ডি’অর এক হওয়ার বছরে বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দুই সংস্থা পৃথক হওয়ার পর এবার প্রথম শিরোপা জেতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
সাকুল্যে রেকর্ড পাঁচবার বিশ্বসেরার মুকুট ওঠে সেই কৈশরেই ফুটবল জাদুকরের তকমা পাওয়া লিওনেল মেসির মাথায়। হয়ত এবারের কোপার ফাইনালে জাতীয় দল আর্জেন্টিনার সেই বেদনাকাব্য না রচিত হলে ষষ্ঠবারের মতও এই মুকুট উঠতে পারত তার মাথায়। অন্যদিকে রোনালদোর হাতে ওঠে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে দুই ইউরোপ সেরার মুকুট। যে কারণে গোল ও গোলে সহায়তায় পিছিয়ে থেকেও এবারের ব্যাল ডি’অরের খেতাবপ্রাপ্ত হন পর্তুগজ তারকা।
২০১৬ সালে তারা যেমন
মেসি রোনালদো
ম্যাচ অ্যাসিস্ট গোল গোল অ্যাসিস্ট ম্যাচ
৬২ ৩২ ৫৯ মোট ৫১ ১৭ ৫৫
৫১ ২৫ ৫১ ক্লাব ৩৮ ১৪ ৪২
১১ ৭ ৮ দেশ ১৩ ৩ ১৩
শেষ ১০ ব্যাল ডি’অর জয়ী
সাল খেলোয়াড় দেশ/ক্লাব
২০০৭ রিকার্ডো কাকা (ব্রাজিল/এসি মিলান)
২০০৮ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ
২০০৯ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা
২০১০ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা
২০১১ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা
২০১২ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা
২০১৩ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৪ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৫ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা
২০১৬ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।