Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাথরেই নষ্ট পরিবেশ

আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রতি বছর বর্ষার পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে লাখ লাখ টন পাথর নেমে আসে। সেই পাথর শুষ্ক মৌসুমে নদীর উৎস মুখ থেকে নিয়ে আসতেন শ্রমিকরা। এভাবেই চলছিল যুগের পর যুগ। নদীর নাব্যতার পাশাপাশি সমৃদ্ধ হচ্ছিল দেশের অর্থনীতি।
হঠাৎ করে ২০১৭ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর উৎস মুখ থেকে পাথর সরানো। সেখানে আস্তে আস্তে জমতে থাকে পাথর। গত ৬ বছরে উজান থেকে এত পরিমাণে পাথর এসে জমাট বেঁধেছে যার জন্য নাদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। ভাঙনের কবলে পড়েছে দু’পাশ। গত বর্ষার পাহাড়ি ঢলে নদী দিয়ে স্বাভাবিক পানি প্রবাহিত হতে না পারায় ধলাই নদীর উৎস মুখে বিজিবি পাথর কোয়ারি ক্যাম্প ভাঙনের কবলে পড়ে। ক্যাম্পের দেওয়াল ঘেঁষে ভাঙনে প্রায় ২শ’ ফুট জায়গা নদীতে চলে গেছে। এ ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি বিজিবি ক্যাম্প। এ ছাড়াও ভাঙন দেখা দেয় কালাইরাগ ও দয়ার বাজার এলাকায়। নদীর তীরবর্তী কালাইরাগ সড়ক ভেঙে প্লাবিত হয় দয়ারবাজার, বালুচর, নাজিরেরগাঁও, কালাইরাগসহ বিস্তীর্ন এলাকা।
বর্ষায় ভারত থেকে প্রবল স্রোতে পানি নেমে আসা নদীতে এখন হাঁটুজল। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি দিয়ে হাজার হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হতো। নব্যতা সঙ্কটে নদীতে পানি না থাকায় সেই জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। যার ফলে কৃষিতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বেকার হচ্ছেন অনেক কৃষক। পানির অভাবে গাছপালা মরে যাওয়ায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।
গত ১১ নভেম্বর ধলাই নদীর উৎস মুখ দেখতে আসেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. নায়েব আলী, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)-এর পরিচালক মিজানুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) এর উপ-পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান। তারা নদীর উৎস মুখের পাথর সরানো, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিবেন।
সেইভ দ্যা হেরিটেজ এন্ড ইনভায়রনমেন্ট এর কো-অর্ডিনেটর আব্দুল হাই হাদি বলেন, পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে প্রতি বছর যে পাথর নেমে আসে সেগুলো আহরণ না করায় নদীর উৎস মুখ ভরে গেছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেই পাথরগুলো আহরণ করতে হবে। এতে করে নদীর নাব্যতা ফিরে পাবে। সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোতে বর্ষা মৌসুমে ৮০ ভাগ পানি নামে। আর পুরো বছরে বাকি ২০ ভাগ পানি নামে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবল স্রোত থাকে। নদী খনন করা না থাকলে আশপাশে ভাঙনের দেখা দেয়। তাই নদীর উৎস মুখসহ নদী খনন করাটা জরুরি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ধলাই নদীর উৎস মুখ পরিদর্শন করেছি। সেখানের পাথরের স্তুপ দেখেছি। সরকারের প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে নদীর নাব্যতার জন্যে উৎস মুখ থেকে সেই পাথরগুলো সরানো যেতে পারে।



 

Show all comments
  • Ibrahim Khalil ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ পিএম says : 0
    নিরেট সত্য তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ ইনকিলাবকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ