Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মীর মশাররফ হোসেন যুগ যুগান্তরে অমর হয়ে থাকবেনঃ কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৭:২৯ পিএম

অমর কথাসাহিত্যিক, কালজয়ী গ্রন্থ 'বিষাদ-সিন্ধু'র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায় সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তভিটায় দু'দিনব্যাপী আলোচনা সভা, মীরের লেখা গান ও নাটকের আয়োজন করে। গতকাল প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ও দু'দিনের অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মীর মশাররফ হোসেন বাংলা আর বাঙালির হৃদয়জুড়ে আছেন। তিনি, কারবালা প্রান্তরের দুঃসহ বেদনার চিত্র যেভাবে বিষাদসিন্ধু গ্রন্থে কলমের কালিতে লেখনীর মাধ্যমে চিত্রায়ণ করেছেন তা অমর কথাসাহিত্যিকের গৌরব অর্জিত হয়েছে। মীর মশাররফ হোসেন যুগ যুগান্তরে অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর অনবদ্য লেখা বাংলা সাহিত্যকে মহিমান্বিত করেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার হাজী রফিকুল আলম টুকু, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি'র সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন। আলোচক ছিলেন লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান। স্বাগতম বক্তা ছিলেন চাপড়া ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মনজু। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি কুষ্টিয়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আরিফ-উজ জামান।


সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন কুমারখালীর লাহিনীপাড়া গ্রামে ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তার মায়ের নাম দৌলতুন্নেসা। মীর মশাররফ জগনমোহন নন্দীর পাঠশালায় পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি কুমারখালীর এমএন হাই স্কুল, কুষ্টিয়া হাই স্কুল ও রাজবাড়ী জেলার পদমদী হাই স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন।


১৮৬০ সালে মীর মশাররফের মা দৌলতুন্নেসা মারা যান। সেই সময় মীরের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এ বয়সেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তিনি উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক প্রায় ৩৫টি বই রচনা করে গেছেন। এরমধ্যে রত্নাবতী, গৌরী সেতু, বসন্তকুমারী, নাটক জমিদার দর্পণ, সঙ্গীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদীনার গৌরব, বিষাদসিন্ধু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মীর মশাররফ হোসেনের ‘আমার জীবনী গ্রন্থ’ থেকে জানা যায়, কুমারখালীর কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন তার সাহিত্যগুরু। হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ও ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামক পত্রিকা দুটিতে মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। গ্রামবার্তা পত্রিকায় মীর মশাররফ সাহিত্য, দর্শন বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশ করেন।

নীল বিদ্রোহের উপরে ‘জমিদার দর্পণ’ সহ প্রায় ২৫টি গদ্য গ্রন্থ রচনা করে মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্য শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। তার সম্পাদিত ‘হিতকরী’ (১৮৯০) পত্রিকায় বাউল শিরোমনি লালন ফকিরের উপরে প্রথম লালন জীবন দর্শন মহাত্মা লালন ফকির প্রকাশিত হয়।

তার পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও পদমদীর নবাব বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ