Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গবেষকদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনালেন বীর প্রতীক সাজ্জাদ আলী জহির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৭:২৪ পিএম

তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছেন। সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশনা অমান্য করে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্দেশনা অমান্য করায় তাকে মৃত্যুদÐ প্রদান করা হয়। তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে “বাঙালির স্বাধীনতা: গেরিলা যুদ্ধ, মিত্রবাহিনীর ভূমিকা ও পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ” শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাজ্জাদ আলী জহির। গত ১২ নভেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে এই একক বক্তৃতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।

একক বক্তার বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘আজকের নির্ধারিত বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকার। গেরিলা যুদ্ধ বিষয়টি আসলে জনযুদ্ধ। এদেশের সাধারণ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষেরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ। এই ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ দেশীয় অস্ত্র- দা, কাঁচি, গরু কাটার ছুরিসহ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এটাই এই যুদ্ধের বিশেষ দিক।’

মুক্তিযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধে পরাজয়ের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে এই এই বীর প্রতীক বলেন, ‘মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আমাদের অস্ত্র দিয়েছে, গোলাবারুদ দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। পাকিস্তান আর্মিতে চাকরিকালে কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে ভারতে চলে আসি। সেখানে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম, যা অবর্ণনীয়। এভাবে অনেক আর্মি অফিসার দেশের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস আমরা যখন পড়ি সেখানে জনযুদ্ধ এবং গেরিলা যুদ্ধের পর্যাপ্ত তথ্য পাই না। এটি অপর্যাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্গত ইতিহাস যদি অনুসন্ধান করা যায় তাহলে অনেক অজানা কাহিনী আমরা জানতে পারবো। একটি রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য মানুষ কত কঠিন সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন। কী করে একজন নিরস্ত্র মানুষকে সশস্ত্র করা যায়, যুদ্ধে নেয়া যায়- তা যদি আমরা অনুধাবন করতে পারি তাহলেই একজন পরিপূর্ণ বঙ্গবন্ধুকে আমরা বুঝতে পারবো।’

দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের লক্ষ, লক্ষ মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন। ৩০ লক্ষ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে জীবন দিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এই দেশে যদি কারো কোনো কিছু পাওয়ার থাকে, দাবি করার থাকে তারা হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর আমরা সবাই বেনিফিশিয়ারি। আমাদের কোনো অধিকার নেই কেনো কিছু চাওয়ার।’

একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১০ জন গবেষক, ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান শাহীন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ