পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অসহযোগিতা এবং তথ্য-উপাত্ত প্রদান না করলেও সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী নয় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আইনের বিশেষ একটি ধারা। তদন্ত ও অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
মামলা রুজুকে ‘ঝামেলা’ মনে করা, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকা এবং চূড়ান্তভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারার আশঙ্কায় আইনটির ১৯(৩) ধারা প্রয়োগে দুদকের অনেক কর্মকর্তাই আগ্রহী নন। তবে রেকর্ডপত্র না পেলে এ ধারাটি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি দেয়া হয়। এতে কখনও কাজ হয় কখনও হয় না।
সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেতে কমিশন বা কমিশনার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এসবের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতা। বিশেষ করে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য-উপাত্তগত সহযোগিতা চাইলে তিনি টালবাহানা করেন কিংবা আইনের আশ্রয় নেন। আবার সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত চাইলেও পাওয়া যায় না। এর ফলে অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার মতো অভিযোগের অনুসন্ধানে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও অনুসন্ধান কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন না। এর ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি উদ্ঘাটন কঠিন হয়ে পড়ে, অন্যদিকে দুর্নীতির আলামত, প্রমাণাদি নষ্ট হয়ে যায়। সন্দেহভাজন আসামি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এমনকি বাদী-বিবাদী ও সাক্ষী অবসরে চলে যান, অসুস্থ হয়ে পড়েন কিংবা মৃত্যুঘটে। এতে একটি সফল অনুসন্ধানের দ্রুত সুষ্ঠু ফলপ্রসূ প্রতিবেদন দাখিল অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করে দুর্নীতি মামলার পরিণতি।
অনুসন্ধান বা তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা প্রদান বিষয়ে দুদক আইনে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আইনটির ১৯ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কমিশনার বা কমিশন হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে উপ-ধারা (১) অধীন ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো ব্যক্তি বাধা প্রদান করিলে বা উক্ত উপ-ধারার অধীন প্রদত্ত কোনো নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি অমান্য করিলে ইহা দণ্ডনীয় অপরাধ হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত এক দশকে এ আইনটির তেমন কোনো প্রয়োগ ঘটায়নি দুদক। তবে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি আইনের সহযোগিতায় অনুসন্ধানে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ এনে কয়েকজন রাজনীতিক ও শিল্পপতির বিরুদ্ধে ্আইনের এ ধারাটি প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়। জরুরি আইন অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর অভিযোগগুলো ধোপে টেকেনি।
সূত্র জানায়, দুদকের বিদ্যমান ৩৮টি আইনের মধ্যে ২৬(২), ২৭(১), ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২), মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১৩ (সংশোধনী) (১৩), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ (৪) ধারার বহুল প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এসব ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণে যে অনুসন্ধান হয় তাতে অহরহ লঙ্ঘিত হয় ১৯ (৩) ধারার। অথচ এ ধারার কোনো প্রয়োগের নজির বিরল।
দুদকের একাধিক হাইপ্রোফাইল মামলার অনুসন্ধান ও তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা জানান, দুদক প্রতিষ্ঠান হওয়ার গত দেড় দশকে ১৯(৩) ধারায় কোনো মামলা রুহুর নজির নেই বললেই চলে। অনুসন্ধান-তদন্তে তথ্য সহায়তা না পাওয়া সহ বহু বাধার সম্মুখীন হলেও এ সংক্রান্ত আইনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমোদন তিনি পাননি। ‘কেন পাননি?’ জানতে চাইলে সিনিয়র এ উপ-পরিচালক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জানান, অনুসন্ধান কিংবা তদন্তের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া। সংশোধিত আইন অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি ও বা প্রতিষ্ঠান দুদককে তথ্য-প্রমাণ প্রদানে বাধ্য। তা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যমূলকভাবেই অনেকে তথ্য দিতে চায় না।
তবে চূড়ান্তÍভাবে কেউ তথ্য না দিলে তার বিরুদ্ধে ১৯(৩) ধারায় পৃথক মামলা দায়ের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কিংবা তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, ওই ব্যক্তি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সহযোগিতা করছে না।
তিনি জানান, অনেকে তথ্য-প্রমাণ না দিয়ে অসহযোগিতা করলেও দুদক কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে আগ্রহী নয়। কারণ মামলা দায়ের করলে তা প্রমাণের দায় বর্তায় দুদক কর্মকর্তার ঘাড়ে। মামলায় সুফলও পাওয়া যায় না।
দৃষ্টান্ত দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ধরা যাক, দুদকের কোনো কর্মকর্তা কারো কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিল। ওই ব্যক্তি যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য-উপাত্ত প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তিনি বলবেন, যে তিনি এ জাতীয় কোনো চিঠি পাননি। এর জবাবে যদি তদন্ত কর্মকর্তা তার চিঠির রিসিভ কপি প্রদর্শন করেন। তখন ওই ব্যক্তি হয়তো বলবেন, চিঠিতে দুদক কর্মকর্তা কি তথ্য চেয়েছেন আমি বুঝতে পারিনি। বিষয়টি বোঝার জন্য তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।
তার গড়িমসির প্রেক্ষিতে দুদক কর্মকর্তা যদি তকে কড়া ভাষায় কিছু বলেন, সেটি লিখিত হলে আইনের আশ্রয় নেন। উচ্চ আদালতের অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রাখেন । যদি ফোনে হয় তাহলে তিনি অভিযোগ আনবেন, দুদক কর্মকর্তা তার কাছ থেকে অর্থ দাবি করেছেন। অন্যায্য সুুবিধাদি চেয়েছেন। এসবের সমস্যার কিনারা করতেই অনুসন্ধান কর্মকর্তা লক্ষ্যচ্যুত হন। অনুসন্ধান দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মূল অভিযোগের অনুসন্ধান মাঝপথে স্থগিত রেখে ১৯(৩) ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে দায়ের করতে হয় পৃথক মামলা। শাখা অভিযোগ প্রমাণের আগে মূল অভিযোগ নিয়েও কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এতে মূল অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে শাখা অভিযোগ নিয়েই অভিযুক্ত ব্যক্তি একের পর একে রিট-মামলা করতে থাকেন। বাস্তবিক অর্থে তথ্য-উপাত্ত প্রদানে অসহযোগিতার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করাটা দুরূহই হয়ে পড়ে।
তথ্য-উপাত্ত না দিয়ে অসহযোগিতাকারীদের বিষয়ে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে দুর্নীতির ঘটনাগুলো নানা ধরণের আইনী জটিলতার মধ্য দিয়ে এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পায়। যেখানে সংশোধিত দুদক আইনে বলা আছে, দুদক আইন অন্য আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে সেখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তথ্য না দিয়ে কীভাবে থাকতে পারে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। দুদকের উচিত দৃষ্টান্তমূলক হলেও এ ধারায় কিছু পদক্ষেপ নেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।