Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই অনুসন্ধান আজও করেনি দুদক

‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পে দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)’র হটলাইন নম্বর-১০৬ থেকে পাওয়া গিয়েছিল তথ্যটি। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই তথ্যের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পে গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারি ঝটিকা অভিযান চালায় সংস্থাটির ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’। নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী পরিচালক মো: জয়নুল আবেদীন। অভিযানে দুই কনস্টেবলের সঙ্গে ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। অভিযান শেষে চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মর্মে কমিশনে প্রতিবেদন (এনফোর্সমেন্ট ইউনিট নথি নং ই.এন ৩৭৩। স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০৩.৩২২.২০) দাখিল করা হয় যে, ডাক তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রকল্প ((২য় সংশোধিত)’র প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দেখা যায় যে, প্রকল্প পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পটির প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের সাথে নেগোসিয়েশন অসম্পন্ন রয়েছে। প্রকল্পের ৯নং লটে বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি জেলার ৪৮টি উপজেলায় ১১০টি ব্যাচে ২২০০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানকারী নির্বাচনে প্রকল্প পরিচালক বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’র পরিচালক মো: আক্তার মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

বলা হয়, কার্যাদেশ পেতে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সর্বোচ্চ স্কোরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিতে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ‘শীর ভিন্টেজ সল্যুশন অ্যান্ড কিলোবাইট আইটি লি:’র কারিগরি স্কোর ছিল ৮০-এর মধ্যে ৭৪.৪০। আর্থিক স্কোর ছিল ২০-এর মধ্যে ১৩.৮৮ আর ‘বিটুএম টেকনোলজিস লি:’র কারিগরি স্কোর ছিল ৮০-এর মধ্যে ৫৯.২০। আর্থিক ছিল স্কোর ছিল ২০-এর মধ্যে ২০। এ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এখানে শীর ভ্যানটেজ তাদের কাজের জন্য ব্যয় দেখায় ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। একই কাজের জন্য বিটুএম ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় দাখিল করে। কাজের সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিটুএমকে কাজ দেয়া হয়। এখানে কারিগরি দক্ষতায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান শীর ভ্যানটেজের সঙ্গে কোনো প্রকার নেগোসিয়েশনে যায়নি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পিপিআর ১২২ বিধি মোতাবেক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ডিপিপি প্রাক্কল্লিত ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারত। সেটি করা হয়নি। পিপিআর ১২২ রাখা হয়েছে এই নেগোসিয়েশনের জন্যই। নেগোসিয়েশন হতে হবে ১ম ও সর্বশেষ দরদাতার সাথে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটানো হয়। কাজটি কারিগরি দক্ষতা বিষয়ক। সে ক্ষেত্রে শীর ভ্যানটেজ’র কারিগরি দক্ষতাকে মূল্যায়নে নেয়ার কথা ছিল। প্রকল্প পরিচালক আক্তার মামুন পরিকল্পিতভাবে সেটি করেননি। দুদকের অভিযান-পরবর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শীর ভ্যানটেজ’র কাছ থেকে যে সার্ভিস পাওয়ার সুযোগ ছিল ‘বিটুএম’র কাছ থেকে সেটি পাওয়ার সুযোগ নেই। এ সকল বিষয়ে আরো অধিক অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিমত দেয়া হয় প্রতিবেদনে। গত বছর ২০ অক্টোবর অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হলেও রহস্যজনক কারণে সেই অনুসন্ধানটি আজও হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দুদকের অভিযান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে বিশেষ বোঝাপড়ার কারণেই সরকারি কেনাকাটায় সংঘটিত এই দুর্নীতির কোনো অনুসন্ধান হয়নি।
এদিকে, সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে না পারায় প্রকল্প দফতর থেকে ‘বিটুএম’র কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ‘বিটুএম’ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার কাজ হলেও শুরুতেই ৩৫ লাখ টাকা কমে কাজ হচ্ছেÑ এমন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করান প্রকল্প পরিচালক। পরে প্রত্যেকটি বিল থেকে ১০ শতাংশ করে অর্থ আক্তার মামুনকে দেয়ার শর্তে কার্যাদেশ পায় বিটুএম। তার বিদেশ সফরেরও আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে প্রশিক্ষণ খরচের সিংহভাগ ব্যয়ই হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের পেছনে। তা সত্ত্বেও প্রকল্প দফতর থেকে কেন বিটুএম’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলোÑ এই ছিল প্রতিষ্ঠানটির জিজ্ঞাসা। যে কারণে বিটুএম এবং প্রকল্প পরিচালকের যৌথ ব্যয়ে হিমাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় দুদকের ‘অধিকতর অনুসন্ধান’। অনুসন্ধানটির পরিণতি জানতে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হাওলাদারকে একাধিকবার তার মোবাইলে কল করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ