Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষমতাসীনরা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস দিচ্ছে -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:২২ পিএম

স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীনরা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ৪৫ বছর পার হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের। স্বাধীনতার ৪৫ বছর আমরা পেরিয়ে এসেছি, এখনো কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ও হতাশার সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের নতুন প্রজন্ম- আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানি না। আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র দাবিদার হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া কোন কথাই মুখ দিয়ে বলতে চান না, তারা গোটা জাতিকে, নতুন প্রজন্মকে একটা বিকৃত ইতিহাস দিচ্ছেন। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম, আমরা সেই বিকৃত ইতিহাসে ভুলতে রাজি নই। দলের নেতা-কর্মীদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন-ইতিহাসের বই পড়ার পরামর্শ দেন মহাসচিব।
রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তন (মহানগর নাট্যমঞ্চে) বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভা হয়। বিজয় দিবসের দিন সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও শেরে বাংলানগরে শহীদ জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যেজন্য যুদ্ধ করেছিলাম, সেই বাংলাদেশ আমরা আজ দেখছি না। ৪৫ বছর পরে আজকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন বাংলাদেশ দেখছি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।
উদাহরণ হিসেবে গাইবান্ধা ও নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সূত্র টেনে তিনি বলেন, অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস, একাত্তর সালে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের বাড়ি-ঘর, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান হানাদার বাহিনীরা। আজকে আবার এতোদিন পরে স্বাধীন বাংলাদেশের পত্রিকায় আমরা দেখছি, আমাদের সবচেয়ে অসহায়, একেবারে পিছিয়ে পড়ে থাকা আদিবাসী সাঁওতালদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে এই বাংলাদেশের রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী। ধিক, লজ্জা। এই লজ্জা রাখার জায়গা কোথাও নেই।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, এই বাংলাদেশ যেখানে একাত্তর সালে পাকিস্তানি বাহিনীরা হিন্দুদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিলো, আজকে সেই দেশে শেখ মুজিবুর রহমান কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দির পুড়িয়ে দিয়ে তাদের নিঃশেষ করে দেয়া হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশের চিত্র।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের নানা কটূক্তির জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসিত কথা বলেন- তারা কুৎসিত মানুষ। আমরা কুৎসিত নই। আমরা জিয়াউর রহমানের শিক্ষায় শিক্ষিত, আমরা সত্য-সুন্দরের মধ্য দিয়ে অসুন্দর ও অসত্যকে পরাজিত করবো।
বাংলাদেশ কারো মুখাপেক্ষী নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সংগ্রাম মায়ের জন্য সংগ্রাম, আমাদের সংগ্রাম আমাদের অধিকারের জন্য। আমার দেশে আমি বাস করবো, আমরা দেশ আমি তৈরি করবো, আমার দেশের লক্ষ্য আমরা ঠিক করবো, কারো কথায় আমি চলব না।  এজন্য আজকে আমাদের তৈরি হতে হবে। এই বিজয় দিবসে আবার নতুন করে শপথ নিতে হবে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের পূর্বপুরুষগণ দেখেছিলো, সেই স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষের এবং আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন, সেই বাংলাদেশ আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এতোটুকু বলতে চাই, আসুন, তৈরি হউন এবং দৃঢ় সংকল্পচিত্রে শপথ গ্রহণ করুন, সেই বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ, মানুষের বাংলাদেশ পরিণত করা আমরা ছাড়া আমরা শান্ত হবো না। আমরা অপশক্তিকে পরাজিত করবো ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, কথা বলার অধিকার নাই, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নাই। সামনে সুযোগ আসছে, এই সরকারের যদি বোধোদয় হয়, তাহলে এদেশে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সরকার সহযোগিতা করবে, যেই পরিস্থিতিতে জনগণ নিজের ভোট নিজেরা দিতে পারবে, যাকে পছন্দ তাকে দিতে পারবে। তাহলেই বর্তমান সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট দূরীভূত হবে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আব্দুুল হাই শিকদার বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী আবুল বাশার, যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম ও ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসানও বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ