Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ডিবি পুলিশের এএসপি, ওসি ও র‍্যাবের এসআই পরিচয়ে ডাকাতি করে তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২২, ৬:২৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় ডিবি এবং র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করার সময় কুখ্যাত কাউসার বাহিনীর ৪ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গ্রেপ্তাররা হলো- ডাকাত দলের সর্দার মো. কাওসার আলী (৩০), মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪০), মো. আলী আকবর (২৪), মো. ইমামুল হক (২৭)।

তাদের কাছ থেকে ২ টি ডিবি জ্যাকেট, ১ টি র‌্যাব জ্যাকেট, ২ টি ওয়াকিটকি সেট, ১ টি হ্যান্ডকাপ, ১ টি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, ০১ টি এনআইডি কার্ড, ২ টি মানিব্যাগ, ১ টি লেজার লাইট, ১ টি ব্যাগ, ৬ টি মোবাইলফোন এবং নগদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র‍্যাব ৩ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

গ্রেপ্তার আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, ডাকাত দলের সর্দার কাওসার আলী নিজেকে ডিবি পুলিশের এএসপি পদবী, মামুন ডিবি পুলিশের ওসি, আলী আকবর র‌্যাবের এসআই এবং এনামুল ডিবি পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আধাঁরে ঘুরে বেড়ায়। আসামীরা জন-সমাগমহীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুযোগ বুঝে ডিবি ও র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চলাচলকৃত যাত্রীবাহী বাসকে লেজার লাইটের মাধ্যমে গতিরোধ করে ভুয়া ডিবি ও র‌্যাব পরিচয় দিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী লুটপাট করে থাকে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গৃহ ডাকাতি, সড়ক ডাকাতি, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডিবি ও র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় ডাকাতি করে থাকে। উক্ত চক্র গত ৩-৪ বছর ধরে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের মূল টার্গেট নিউমার্কেট এবং পল্টন এলাকার ব্যাংকের কাস্টমার।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যখন কোন এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন ডাকাত দলের সর্দার কাওসার সবাইকে নিয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসায় সমবেত হয়ে সেখান থেকে ডাকাতির স্থান রেকি করে। যখন কোন ব্যাংকের কাস্টমার ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র গমন করে তখন ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুযোগ বুঝে তার টাকা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেয়। এ পর্যন্ত উক্ত চক্র ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫-২০ টির অধিক ডাকাতি করেছে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, চক্র ডাকাতির দিন ২/৩ টি ব্যাংকের উপর তাদের গোয়েন্দা নজরদারী চলমান রাখে। কোন কাস্টমার বেশি অংকের টাকা উত্তোলন করে অন্য কোথায় গেলে তাদের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তির পিছু নেয়। কাস্টমার যখন টাকা নিয়ে কোন যাত্রীবাহী বাসে ওঠে তার সাথে ডাকাত চক্রের গোয়েন্দা সদস্য একই বাসে ওঠে। তারপর ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে পরিবহনের গতিপথ এবং লোকেশন বলে দেয় ও নিয়মিত আপডেট দিতে থাকে।

তিনি বলেন, ডাকাত দলের নির্ধারিত স্থানে বাকি ডাকাত সদস্যগুলো ডিবি ও র‌্যাবের জ্যাকেট পরে লেজার লাইটের মাধ্যমে বাসটি গতিরোধ করে এবং বাসে থাকা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী অথবা হত্যা মামলার আসামী বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে তাদের মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে ভিকটিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ডাকাত দলের সর্দার কাওসার এর নামে বিভিন্ন থানায় ৩ টি ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন সময় বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে তার সহযোগীদের সমবেত করে ডাকাতি কার্যক্রম সংগঠিত করে থাকে। সে এবং তার চক্রটি ডাকাতি কার্যক্রম এর সুবিধার্থে যাত্রাবাড়ী এলাকার বস্তিতে ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে সেখান থেকে তাদের ডাকাতি পরিকল্পনা এবং রেকি কার্যক্রম করে থাকে। তার দৃশ্যমান কোন পেশা নেই।

এছাড়াও তার প্রধান সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নামে বিভিন্ন থানায় ১ টি ডাকাতি, ২ টি অস্ত্র মামলা, ২ টি ভুয়া সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে ২০২০ এবং ২০২১ সালে বিভিন্ন মেয়াদে ২ টি মামলায় সর্বমোট ২০ মাস জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসা থেকেই সে তার কার্যক্রম চালায়।

আলী আকবর মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকে এবং ইমামুল গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা থেকে কাওসার বাহিনীর সাথে ঢাকায় বস্তিতে এসে সমবেত হয় এবং একসাথে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালাত। তাদেরও কোন দৃশ্যমান পেশা নেই বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

ডাকাত দলের ৬ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২ জন ডাকাত পলাতক রয়েছে। পলাতক ডাকাতদের গ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ