Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প

রিয়েল তন্ময় | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গ্রাম বাংলার আবহমানকাল থেকে চলে আসা অন্যতম একটি শৈল্পিক বিনোদনের মাধ্যম যাত্রাপালা। তবে কালপরিক্রমায় এ শিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন। বর্তমানে যাত্রার নামে অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল নৃত্য আর অশ্লীল কৌতুক ও সঙ্গীতই বেশি পরিবেশিত হয়। একটা সময় গ্রাম-বাংলার মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল যাত্রাপালা। এসব যাত্রাপালায় লোককাহিনী, ঐতিহাসিক ঘটনাসহ সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা অভিনয়ের মাধ্যমে সরাসরি তুলে ধরা হতো। বিশেষ করে শীতকালে গ্রামে গ্রামে যাত্রাপালা আয়োজনের হিড়িক পড়ত। মানুষ শীতের মধ্যেই রাতভর যাত্রাপালা উপভোগ করত। যাত্রার সেই দিন এখন নেই। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ঐহিত্যবাহী এ শিল্প বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাই পারে এ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে। হাওর অঞ্চলের দিকে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ ছিল ঢব যাত্রাপালা। এ যাত্রাপালা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে মাঝেমধ্যে মঞ্চস্থ হলেও এটি বিলুপ্তির পথে। ঢব যাত্রাপালার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর জন্য কোনও উঁচু মঞ্চ তৈরি হয় না। দর্শক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একই স্তরে থাকেন। ছেলেরা গোঁফ কামিয়ে মেয়ের অভিনয় করেন। আবার প্রয়োজনে কালি দিয়ে গোঁফ আঁকা হয়। কাহিনীর প্রয়োজনে ছেলে-মেয়েদের জন্য বাহারি সব চুল, ঝলমলে পোশাক, মুকুট আর তরবারির ব্যবহার করা হয়। মেকআপও শিল্পীরা নিজেই করেন। যাত্রাপালা যেহেতু গ্রামেগঞ্জে একেবারেই অশিক্ষিত ও নিম্নবিত্ত মানুষের বিনোদনের খোরাক তাই তাদের অভিরুচির সাথে মিল রেখে সহজ- কাহিনী কিংবা যুদ্ধের বীরত্বগাথা ইত্যাদি পটভূমি হিসেবে নেওয়া হয়। যাত্রার আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যা থিয়েটার থেকে আলাদা করে, সেটা হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল। মঞ্চনাটকে কিংবা থিয়েটারে দর্শকরা সাধারণত মঞ্চের সামনে বসে। যাত্রামঞ্চ চতুর্দিকে খোলা থাকে এবং মঞ্চের চতুর্দিকে দর্শক বসে। ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় যে তার সামনে, পেছনে, ডানে, বামে সবদিকেই দর্শক রয়েছে। তারা তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। এর ফলে তাদের অভিনয় দক্ষতা আরো বেশি প্রয়োজন হয়। দর্শক পর্যবেক্ষণ করায় তাদের ভুলভ্রান্তির সুযোগও কম থাকে। এটা যাত্রার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হারিয়ে যেতে বসা এই যাত্রা শিল্প নিয়ে নাট্যপরিচালক কায়সার আহমেদ বলেন, যাত্রা শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। এটাও তো একটা শিল্প। একটা সময় আমরা ছোটবেলায় দেখতাম, যাত্রায় ছেলে ময়ে সেজে অভিনয় করত। এখনকার ছেলে মেয়েরা এসব দেখে না। আমাদের এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই যাত্রা শিল্পের কথা মাথায় রেখেই আমি ‘বকুলপুর’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছি, যা বর্তমানে টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে। যাত্রার প্রতি যাতে মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়, সে কথা মাথায় রেখে নাটকের গল্প সাজিয়েছি। এখানে যাত্রার নানান দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই নাটকটি দেখলে এখনকার প্রজন্ম যাত্রা স¤পর্কে জানতে পারবে। আমাদের সবার স্ব স্ব জায়গা থেকে ঐতহ্যবাহি এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
খ্যাতিমান যাত্রানায়ক মৃণাল কান্তি বলেন, যাত্রা বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগ্রাম আন্দোলনকে বেগবান করেছে। যাত্রা লোক শিল্পের বাহন। যাত্রা যুগে যুগে মানুষকে সাম্যের বাণী শুনিয়েছে। বিভিন্ন সংগ্রামে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। অথচ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রা শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। এই যাত্রার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পালাকার, গায়ক, অভিনয়শিল্পী, নৃত্যশিল্পী, দলনেতা, মালিক, পরিচালক, যন্ত্র শিল্পীসহ অসংখ্য মানুষের জীবিকা। তিনি বলেন, যাত্রা শিল্পের পেশাগত কোনো নিশ্চয়তা নেই। কখনো যাত্রানুষ্ঠান হয়, কখনো বন্ধ হয়ে যায়। এর কোনো নীতিমালা নেই। সরকার যদি এর একটি নীতিমালা করত, তাহলে যাত্রাশিল্পের পেশাগত সংকটের অবসান ঘটত এবং বাংলার আদিকালের এই শিল্প রক্ষা পেত। প্রাক্তন যাত্রাশিল্পী কল্পনা ঘোষ বলেন, শিশুকাল থেকে যাত্রাপালায় অভিনয় করছি। এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে ৩ ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি। ভালবেসে এখনো ধরে রেখেছি যাত্রাভিনয়। বর্তমানে তরুণরা আর যাত্রাভিনয়ে আসতে চায় না। তরুণরা এগিয়ে এলে এ শিল্পের উত্তরণ ঘটতো। এটি একটি ভাল মাধ্যম। এখানে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল যাত্রাশিল্পীদের জন্য সুদিন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে এ শিল্পে অশ্লীলতা, জুয়া ঢুকে পড়ে। অনেক যাত্রাপালার মালিক অধিক মুনাফার আশায় অশ্লীলতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে যাত্রাপালার নামে বিভিন্ন মেলায় কেউ কেউ নারী দেহের অশ্লীল পসরা বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝে শিল্পের কোন চর্চা নেই। ঐতিহ্যের কোন ছাপ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->