Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ধিত সময়েও হচ্ছে না নির্মাণ

মুন্সীগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ-ঢাকা সড়কের মোল্লাবাজার ব্রিজ চরম হতাশা ও ভোগান্তিতে দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষ

মো. আব্দুল গনি, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লাবাজার ব্রিজের নির্মাণ কাজ বর্ধিত সময়েও শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর বাড়িয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় ব্রিজের নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও তাতেও কোন উন্নতি ঘটেনি ব্রিজের নির্মাণ কাজের। এতে নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তাদের ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না। ব্রিজ নির্মাণে চরম গাফলতির কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের মালিকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেয়াপারাপারের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নদীর দু’পাড়ের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিত্যদিন নৌকা পারাপারের মাধ্যমে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থ অন্যদিকে সময়ের অপচয় হচ্ছে। থমকে গেছে নদীর দুই পাড়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। তবে ব্রিজের নির্মাণ কাজের গতির ধরণ দেখে অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন আগামী আরো ২ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৪ সালেও ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হবে কিনা সে বিষয়েও চরম সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও তত্ববধানে ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, টুঙ্গীবাড়ি, লৌহজং উপজেলার একাংশ ও মুন্সীগঞ্জসদর এলাকার একাংশের মানুষ যাতে কেরানীগঞ্জ হয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর ২০১৮ সালের ১০ জুন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২৫২ মিটার দৈর্ঘ এবং ১০মিটার প্রস্থোর এই ব্রিজটির নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা। সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোল্লাবাজারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একটি অফিস থাকলেও সেখানে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি ব্রিজের কোন নির্মাণ শ্রমিককেও ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়নি। ব্রিজের ৮টি পিয়ারের সব কয়টি পিয়ারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে আরো দেড় বছর আগে। নদীর দক্ষিণ প্রান্তে একটি স্প্যান ও গার্ডারের নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। এক কথায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ এখন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ৪/৫ বার ব্রিজের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্রিজের দুই পাড়ের জমি অধিগ্রহন নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়ায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ ধীর গতির মুখে পড়ে। চাহিদা মোতাবেক ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ প্রায় মুখ থুবরে পড়ে।
ঢাকা জেলা যুবলীগের সদস্য কোন্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের জন্য ব্রিজ নির্মানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির মালিককে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ একাধিক বার তাগিদ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, সেটি এখন ভাববার বিষয়। ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় নদীর দুই পাড়ের মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। কোন্ডা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর ইকবাল আহমদ নিবির বলেন, ব্রিজটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্মিত না হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের ৩টি উপজেলার মানুষকে নিত্যদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় জরুরি রোগি ও প্রসুতিকে নিয়ে খেয়া পার হয়ে হাসপাতালে সঠিক সময় পৌঁছতে না পারায় অনেক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে।
সিরাজদীখানের লতবদী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এসএম সোহরাব হোসেন বলেন, মোল্লাবাজার ব্রিজটি দ্রুত নির্মিত না হওয়ায় সিরাজদীখান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নবাসীর জন্য খুব দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সিরাজদীখান থানার বালুর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিন খেয়া নৌকা পারাপারে অনেক সময় ঘাটের লোকজনদের হাতে আমাদের লঞ্চিত হতে হয়। মোল্লাকন্দি গ্রামের আলতাপ হোসেন আলতু বলেন, ব্রিজ নির্মাণের ধীরগতির কারণে আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ কৃষি পণ্য পরিবহনেও নানা সমস্যায় পড়ছি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ ৬০ ভাগ হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত আরো সময় বর্ধিত করা হয়েছে। আশা করছি এখন দ্রুত গতিতে নির্মাণ এগিয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ