Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুমাই বিলে ধান কাটার ব্যস্ততা নেই

দু’দফা বন্যায় ও এক মাস বিল ডুবে থাকায় নষ্ট হয় আমনের চারা

নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার আমন ধান কাটার উৎসব শুরু হলেও বাংলাদেশের ২য় বৃহৎ শস্যভান্ডার খ্যাত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের দৃশ্য উল্টো। ধান কাটার ব্যস্ততা নেই কৃষকেরা। খাঁ খাঁ করছে ফসলের মাঠ। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দুই দফা বন্যায় গত এক মাস বিল ডুবে থাকায় নষ্ট হয় আমনের চারা। এই বিলের প্রায় ৩ হাজার কৃষকের ঘরে বর্তমান ধান শূণ্য। গুমাই বিলের চন্দ্রঘোনা মরিয়মনগর এবং কদমতলী এলাকা ঘুরে জানা যায়, ধান নেই। বিভিন্ন স্থানে জমি একাবারে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তবে গুমাই বিলের অংশ বিশেষ চন্দ্রঘোনায় বিলের কিছু স্থানে ধানে রং এসেছে।
উপজেলা দায়িত্ব থাকা কৃষি উপ-সহকারী ও কৃষকেরা জানান, আগস্টের প্রথম থেকে বৃষ্টি সূচনা হয়। পরের সপ্তাহে তা আরও তীব্র হয়। জমি পানিতে ডুবে যায়। পানি ছিল পুরো আগস্ট মাস। তখন সম্পূর্ণভাবে নষ্ট রোপা আমন। এরপর কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকি হিসেবে আমনের চারা দেয়া হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ভেসে যায় কৃষকের স্বপ্ন সরেজমিনে গুমাই বিলে গেলে কৃষকেরা তাদের দুর্দশার কথা জানান। কথা হয় কৃষক আবদুস সোবহানের সঙ্গে। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার কদমতলী গ্রামে। চাষ কেমন হলো—জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘বন্যার পানিতে সব শেষ।’ স্ত্রী, ছেলেমেয়ে মিলে সাতজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। তিন বেলা খাবার জোটাতে এখন করছেন দিনমজুরি। তাও সব সময় কাজ জুটছে না।
আবদুস সোবহান বলেন, ‘আট কানি জমিতে আমনের চাষ করেছি। প্রতি কানিতে খরচ পড়েছে ছয় হাজার টাকা। প্রথম দফা বন্যায় সব ভেসে গেছে। এরপর কৃষি অফিস থেকে কিছু চারা দেওয়া হয়। আরেক কৃষক আবু তালেবের স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ ছয়জনের সংসার চালাতে তিনি এখন চালাচ্ছেন অটোরিকশা। তালেব তিন কানি জমিতে আমন রোপণ করেন। তিনি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষে খরচ করেছি। এখন আর কিস্তি চালাতে পারছি না। ঠিকমতো খাওয়ার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার গুমাই বিলের মধ্য ও পূর্ব মরিয়মনগর, কদমতলী, মধ্য ও পূর্ব চন্দ্রঘোনা, শান্তিনিকেতন ও ব্রহ্মোত্তর (আংশিক) এলাকায় আমনের চাষ হয় ১ হাজার ৬৬৭ হেক্টরে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৯৭ হেক্টরের চাষ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবছর হেক্টরপ্রতি আমন উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার মেট্রিক টন। সেই হিসাবে মোট ধান উৎপাদন হয় গড়ে প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন। এবার তা নেমে আসবে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন, এবারের বন্যায় রাঙ্গুনিয়ার অন্য এলাকার তুলনায় গুমাই বিলে আমন চাষে বেশি ক্ষতি হয়েছে। অথচ এখন কৃষকদের ধান কাটার উৎসব। কিন্তু এই সময়ে কৃষকেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, কৃষকদের কষ্ট দূর করতে কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ১৯০ জন কৃষককে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪০ জনকে সরিষা ও ৯৫০ জনকে ভুট্টা চাষের উপকরণ দেওয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমের আগে তারা সরিষা চাষ করতে পারবেন। তবে যারা ভুট্টা চাষ করবেন তারা বোরো চাষ করতে পারবেন না, ভুট্টার পর সবজি চাষ করতে করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ