প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
একটা সময় নাটকের সংলাপে শুদ্ধ বাংলা ভাষার প্রয়োগ হলেও বর্তমানে বেশিরভাগ নাটকের সংলাপে আঞ্চলিকতার প্রভাবটাই বেশি দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে শুদ্ধ ভাষা মিলিয়ে ভাষার এক ধরনের বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। ৯০ দশকের দিকে নাটকে শুদ্ধ ভাষার যে উচ্চারণ ও আবেদন ছিল, তা এখন নেই বললে চলে। সিংহভাগ নাটকের ভাষা এখন অঞ্চলকেন্দ্রিক বা আঞ্চলিক। আঞ্চলিক ভাষা দোষের না হলেও, তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না। ভুল উচ্চারণ বেশি দেখা যায়, যেগুলোর অর্থও বোধগম্য নয়। নানা অজুহাতে ব্যবহার করা হচ্ছে অশ্লীল সংলাপও। অশুদ্ধ উচ্চারণ, অসংলগ্নতা ও অশ্লীল ভাষার নাটক একশ্রেণীর দর্শক লুফে নিলেও রুচিশীল দর্শকদের কাছে খুবই দৃষ্টিকটু ও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। নাট্যবোদ্ধারা বলছেন, দীর্ঘ সংগ্রাম আর রক্ত ঝরিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি আমরা। এ ভাষার বিকৃত উপস্থাপন ভাষার অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নাটকে শুদ্ধ বাংলায় সংলাপের ব্যবহার শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। যদি আঞ্চলিক কোনো নাটক হয় সেটা ভিন্ন কথা। বিনা কারণে টিভি নাটকে বাংলা ভাষার উচ্চারণে অশুদ্ধতা, অসংলগ্নতা একেবারেই সমর্থন করা যায় না। ভাষা বিকৃতির এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা জরুরি। তা নাহলে, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আজকাল বাস্তবতার দোহাই দিয়ে জাঁকজমক আয়োজনে মানহীন গল্প ও সংলাপে নাটক নির্মিত হচ্ছে। সেখানে বিকৃত ভাষা স্থান পাচ্ছে। সাময়িকভাবে মানুষ সেটা লুফে নিলেও তা কিন্তু টিকছে না। সে কারণে কখনও বরিশাল, কখনও ময়মনসিংহ, কখনও পুরান ঢাকা, কখনও বা নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে অনেক নির্মাতা নাটক বানাচ্ছেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভাষা বিকৃতির মাধ্যমে বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নাটক বা সিনেমায় যে অঞ্চলের ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাও বিকৃত করা হচ্ছে। যেমন, নাটক বা সিনেমায় নোয়াখালীর ভাষায় কোনো চরিত্রে যে অভিনেতা বা অভিনেত্রী অভিনয় করেন, তিনি নোয়াখালীর ভাষাটা রপ্ত করেন না। এর ফলে ওই অঞ্চলের দু-চারটি শব্দ জুড়ে দিয়ে এমন একটা ভাষা ব্যবহার করে সেটাকে নোয়াখালীর ভাষা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা ওই অঞ্চলের ভাষার বিকৃতি। এ প্রসঙ্গে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, আসলে নাটকের ভাষার ব্যবহার কিংবা সংলাপ নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। একজন বললেই হবে না। সবাই যদি সম্মিলিতভাবে চেষ্টা না করেন, তবে ভাষার বিকৃতি হতেই থাকবে। ভাষা বিকৃতি এবং নাটকে উপযুক্ত সংলাপ না পাওয়ার অনেক কারণও আছে। সব কিছুতে এখন অবহেলা, আর যাচ্ছেতাই অবস্থা চলছে। সবাই মিলে এ সমস্যাগুলোর সমাধানে সচেতন হতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার দোষের কিছু নয় বলে অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু টিভি নাটকে লক্ষ্য করছি, আঞ্চলিক ভাষার নাম করে ভাষার একটা অদ্ভুত উচ্চারণে ভিন্ন রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেটা আমি একেবারেই সমর্থন করি না। তবে অনেক সময় নির্মাতাদের অনুরোধের কারণে অভিনেতাদের এ ধরনের নাটকে অভিনয় করতে হয়। আমি নিজেও করেছি। তবে আমি ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করি।
কলকাতার নাটক সিনেমার প্রতি অনেকের আকর্ষণ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, ওদের ভাষাটা মুগ্ধ করে। শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলে তারা। তার মধ্যে কলকাতার টান থাকে। তবে তারা উচ্চারণে জোর দেয়। প্রমিত ভাষাটাকে গুরুত্ব দেয়। যেটা একটা সময় আমাদের নাটক-সিনেমার বিরাট গুণ ছিল। খান আতাউর রহমান, হুমায়ূন আহমেদ, আহমদ জামান চৌধুরী, মমতাজউদ্দীন আহমদের মতো বিখ্যাত চিত্রনাট্যকাররা সাফল্যের সঙ্গে ভাষার সুন্দর প্রয়োগ ঘটাতেন। এখন যে যেখানে যেমন ইচ্ছা শব্দ ব্যবহার করে সংলাপ লিখছেন। শিল্পীরা সেগুলো উচ্চারণ করে দর্শকের কাছে তুলে দিচ্ছে। নাটকে ভাষার এই বিকৃতি প্রসঙ্গে প্রবীণ অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, খুবই কষ্ট পাই যখন দেখি নাটকে ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। কিছু মানুষ এগুলো জোর করেই করাচ্ছে। তাদের কথা হচ্ছে, আমরা তো প্রমিত বাংলায় কথা বলি না। তাহলে নাটকে কেন বলব। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের একটাই বক্তব্য, ন্যাচারাল অভিনয় করার জন্য এ ভাষায় কথা বলতে হবে। এটা হতে পারে না। আমরা তো এই বিকৃত ভাষার জন্য যুদ্ধ করিনি। মানুষ তো ওই ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। প্রাণ দিয়েছিলেন প্রমিত বাংলা ভাষার জন্য। যেটা আমাদের মাতৃভাষা। কেউ তার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই পারে, কিন্তু সেটাও সঠিক শুদ্ধভাবে বলতে হবে। বাংলাকে যখন অশুদ্ধ করে বলি তখনই আমরা অপরাধটা করি। সে অপরাধবোধটাই যদি না থাকে, তাহলে তো তাকে সেখান থেকে ফেরানো যায় না। আমি যতদূর জানি, সরকারে একটা নির্দেশনাও আছে নাটক, সিনেমায় শুদ্ধ ভাষা ছাড়া ভাষাকে নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু এগুলো কেউ মানে না। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়। রেডিও এবং টেলিভিশনে যারা খবর পড়ছেন, তাদের উচ্চারণে প্রচুর ভুল থাকে। এগুলো নিয়েও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। জানি না, এর কোনো উত্তরণ ঘটবে কিনা। সবকিছু তো সরকারি নির্দেশনা দিয়ে হয় না। নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞদের মতে, শুদ্ধ ভাষাটা নাটকের মান ধরে রাখে। দর্শকের মনও ধরে রাখে। সে ভাষাটা আর যাই হোক কারও খারাপ লাগে না। কিন্তু ‘আইছি’, ‘গেছি’ ধরনেরপ ভাষা নাটক-সিনেমাকে মানহীন করে। নাটকের ক্ষেত্রে কোনো সেন্সর বোর্ড নেই। তবে যারা বিভিন্ন চ্যানেলে নাটক বাছাইয়ের দায়িত্ব পালন করেন, তারা সচেতন হলে নাটকের ভাষাবিকৃতি রোধ করা সম্ভব। শুদ্ধ ভাষার সঙ্গে অশুদ্ধের মিশ্রণে শ্রোতা বা দর্শক ক্ষণিকের আনন্দ পেলেও শেষ পর্যন্ত সেই ভাষা স্থায়িত্ব পায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।