Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে কারণে কলারোয়ায় সার সঙ্কট

ভর্তুকির সারের বাড়তি দাম : কৃষকের পকেটের কোটি কোটি টাকা লোপাট

আব্দুল হামিদ, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আমন ধানে সার প্রয়োগ শেষ। সবজি চাষে সারের তেমন প্রয়োজন পড়েনি। এর মধ্যে কলারোয়ায় আবারো ভূর্তুকির সার বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়েছে। জানা গেছে, কলারোয়ায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৭৫৯৪ হেক্টর। এরমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টরে বোরো, ১২ হাজার হেক্টরে আমনধান, ২২৬০ হেক্টরে আউশ এবং সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়। প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হাজার হাজার ট্রাক কুমড়া, পটল, উচ্ছে, বেগুন, টমেটা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। প্রায় সাড়ে ১১শ’ হেক্টরে আম ও কুলের আবাদ হয়। বিপুল পরিমাণ আম বিদেশে রফতানি করা হয়। এদিকে আবাদী জমির মধ্যে ৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর দুই ফসলী। ৬০৪৪ হেক্টর জমি ৩ ফসলি। আর ৪ ফসলী বহু জমিও রয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যে, আবাদী জমি সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর হলেও সারা বছর ফসল চাষ হয ৩৯ হাজার ৬শ’ ৩২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ফসলের নিবিড়তা ২৪০%। নিবিড় চাষাবাদে অর্থাৎ এক জমিতে বছরে ৩/৪ ফসল উৎপাদনে মাটির উর্বরা শক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তাই সারের চাহিদা বেশি থাকায় ডিলাররা বাড়তি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেয়। কোমরপুরের কৃষক জেহের জানায়, ইউরিয়া ২৫ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা, ডিএপি ২০ টাকা এবং পটাশ ৩০ টাকা কেজি কিনে উচ্ছে চাষ করেছেন। রামকৃষ্ণপুরের কৃষক আলাউদ্দীন জানায়, ইউরিয়া ৩০ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ডিএপি ২৫ এবং পটাশ ৩২ টাকা কেজি দরে কিনে তিনি সবজি চাষ করেছেন। ইলিশপুরের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম বলেন, কিছু সবজি ছাড়া মাঠে সারের প্রয়োজন নেই। তারপরেও ৫০ কেজির বস্তা ইউরিয়া ১৩শ’ টাকা, টিএসপি ১৩শ’ টাকা এবং পটাশ সাড়ে ৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্তার আসাদুজামান জানায়, তিনি ১১৫ টাকা দিয়ে ৪ কেজি ইউরিয়া সার কিনেছেন। লাউডুবির শহিদুল জানায়, এখন বাইরের জেলা বা উপজেলার সার আনার প্রয়োজন নেই। তাহলে কলারোয়ার বরাদ্ধের সার বাড়তি দামে বিক্রি করে কৃষকের পকেটের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ দেয়া হচ্ছে কেন। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বামনখালী, দেয়াড়া ও কলারোয়া বাজারের কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা বাড়তি দামে সার বিক্রি করায় সারের বাজার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিসিআইসি ডিলার সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বাইরের জেলা/উপজেলা থেকে আনা সারে সামান্য বাড়তি পয়সা নেয়া হয় বলে জানান। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বাৎসরিক ইউরিয়া সারের চাহিদা ৯ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বরাদ্ধ পাওয়া যায় মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন। তাই চলতি মৌসুমে হৈ চৈ কালে ২৪৭ মেট্রিক টন ইউরিয়ার অতিরিক্ত বরাদ্ধ বাজারে ছাড়তে হয়। এছাড়া চাষির চাহিদা পূরণে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলা, কখনো খুলনা/বাগেরহাট থেকে বিপুল পরিমাণ সার এনে কলারোয়ার কৃষকের চাহিদা পূরণের বিসিআইসি ডিলারদের দাবি সত্য বলে কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়। এতে উল্লিখিত জেলা উপজেলার ডিলারদের কাছে বাড়তি সার থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। ভিন্ন উপজেলা/জেলা থেকে আগত সার আন্তঃউপজেলা ও আন্তঃজেলায় চোরাচালন এবং বাড়তি দামে সার বিক্রির সুযোগ করে দেয়। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে প্রয়োজন কম সেখানে সারের বরাদ্ধ বেশি কেন। আর কলারোয়া চাহিদামত সার পায় না কেন। যেহেতু ভতুর্কি বর্হিভূত একদানা ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ও ডিএপি সার দেশে প্রবেশ করেনা। সার আমদানীতে ইতোপূর্বে সাড়ে ৭ হাজার কোটি আর বর্তমানে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। শুধু কৃষকের স্বার্থে নয়; বরং আমজনতার পেটের ক্ষুধা নিবারণ করে জীবন বাচাতে-এই ভর্তুকি। কিন্তু কার স্বার্থে ভতুর্কির সার নিয়ে চোরাচালান আর কৃষকের পকেটের টাকা লোপাটের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? আর ন্যার্যমূল্যে সার প্রাপ্তি নিশ্চিতে বাধ্যতামূলক প্রকাশ্য মূল্য তালিকা প্রদর্শন ও মেমো প্রদান বাস্তবায়নে গড়িমসি কেন-সেই প্রশ্ন গণ মানুষের।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন চাহিদা মত বরাদ্ধ না হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাড়তি দামে সার বিক্রির বিষয় তিনি জানেন না।
উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, বাড়তি দামে সার বিক্রির কথা শুনেছেন, কিন্তু ডিলাররা তা অস্বীকার করে। এব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিক বার কল করা হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফোন রিসিভ করেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ