পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নওগাঁয় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে মাদ্রাসা শিক্ষকদের করণীয় শির্ষক এক বিশাল সমাবেশে এ এম এম বাহাউদ্দীন
রেজাউল করিম রাজু/এমদাদুল হক সুমন : দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন জনমত সৃষ্টি ও সমাজ গঠনে এদেশের ওলামা-মাশায়েখরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সমাজ গঠনে এরা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই আলেম সমাজের গুরুত্ব দেশ-বিদেশে বাড়ছে। কারণ ওলামা মাশায়েখরা সমাজের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। আগামী দিনের বাংলাদেশ আদি অকৃত্রিম ইসলামের। উদার সহনশীল মানবতাবাদী মুসলমানদের এদেশ হবে বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় একটি আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র। যার নেতৃত্ব থাকবে দেশের আলেম ওলামা মাশায়েখ তথা তাসাউফ পন্থীরা। সারা বিশ্বে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সর্বত্র তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সারা বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা এই সেঞ্চুরি শেষে দাঁড়াবে দু’শো কোটিতে। আজ তুরস্ক রাশিয়া মিলে অটোমান সাম্রাজ্য গড়ার পরিকল্পনা করছে। আগামী দিনে মুসলিম সাম্রাজ্য বেড়ে যাবে। মুসলিম দুনিয়া শক্তিশালী থাকলে আমরা শক্তিশালী থাকব।
গত মঙ্গলবার নওগাঁর নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে মাদ্রাসা শিক্ষকদের করণীয় শির্ষক এক বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সম্মানীত অতিথি হিসাবে তিনি একথা বলেন। নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নওগাঁ জেলা সভাপতি মওলানা মো: আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ মোমতাজী, নওগাঁ সহকারী পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মও: ইদ্রিস খান, যুগ্ম-মহাসচিব মওলানা মো: মোকাদ্দাসুল ইসলাম, মওলানা পি,এম, আদম আলী, মওলানা আইয়ুব আলী প্রমুখ। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। তাকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি এরই ইঙ্গিত বহন করে। আমরা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই। কোন ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা যাবে না। এদেশের তৌহিদী জনতা সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে।
তিনি বলেন, আমরা দূঢ়তার সাথে বলতে পারি জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্ত সন্ত্রাস ফেতনা ফ্যাসাদের সাথে আলেম ওলামা জড়িত না থাকার বিষয়টি আজ প্রমাণিত সত্য। বরং এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনমত সৃষ্টি করে চলেছে। একটা সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার জন্য। তারা আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করে চলেছে। আর তাই সমাজের সর্বত্র আলেম ওলামারা সম্মানীত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। তাদের এ সম্মান ধরে রাখার আহ্বান জানান। কোন ষড়যন্ত্রকারী বিদ্বেষী মহল যাতে এ সুনাম আর ঐক্যবদ্ধতা নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের সম্মান বাড়ান। তলে তলে সমাজ ব্যবস্থা ইসলামী হচ্ছে। সেই সমাজ বিনির্মাণে আপনাদের কাজ করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার বিষয়ে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদরাসার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আমরা আপনাদের দাবি দাওয়া উনাকে অবহিত করেছি। তিনি এসব ব্যাপারে আন্তরিক। শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক দৃষ্টি পোষণ করেন। ইনশাআল্লাহ জাতীয়করণ করা হলে কেউ বাদ যাবেন না। ইতোমধ্যে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থায় মাদরাসা লাইনের শিক্ষার্থীদের নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন এ ব্যাপারে সরকারী কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। অতি উৎসাহী মহল হয়তো বিঘœ ঘটাচ্ছে। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে এক্ষেত্রে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কেউ অবজ্ঞা করতে পারবে না। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান মর্যাদা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও শিক্ষা মন্ত্রীর সহযোগিতায় এদেশের আলেম ওলামা মাশায়েখদের দীর্ঘদিনের দাবি আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তা পূরণ হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রিশ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী সউদী আরব সফরকালে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা জানালে সউদী সরকার এর উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে কিছু কাজও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। এখানে যেন বিদেশ থেকে শিক্ষার্থী পড়তে আসে সে প্রচেষ্টা থাকবে।
জমিয়ত মহাসচিব অধ্যক্ষ সাব্বির আহম্মেদ মোমতাজী বলেন জমিয়াতুল মোর্দারেছীনের সাথে ওলি পীর মাশায়েখ আলেম ওলামা জড়িত। এই সংগঠন জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। বরং সকল সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে নিরুসাহিত করে। জঙ্গিবাদের কোন স্থান মাদ্রাসায় নেই। কিছু বর্ণচোরা ব্যক্তি উদেশ্যমূলকভাবে মাদ্রাসায় জঙ্গি খোঁজেন। তাদের মতলব ভাল না। এদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন মাদ্রাসায় কোন জঙ্গি নেই। মহল বিশেষ এদেশে অশান্তি সৃষ্টি করে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র করছে। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। যাতে বিভ্রান্ত না হয়।
তিনি বলেন, ১৯৩৭ সাল থেকে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মরহুম আব্দুল মান্নান (রহ:)-এর প্রচেষ্টায় আজ মাদ্রাসা শিক্ষকরা এখন একটা সম্মানজনক পর্যায়ে রয়েছেন। আগে মুষ্ঠির চাল আর সরকারী পঞ্চাশ টাকা বেতন দিয়ে চলতো মাদ্রাসার কার্যক্রম। আর এখন কত পান নিজেরা হিসেব করে দেখেন। বেতন স্কেল হয়েছে। প্রাইমারী স্কুল জাতীয়করণ করলে এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করতে হবে। তিনি বলেন, কয়েকটি স্কুল-মাদ্রাসা জাতীয়করণ করলে সমস্যার সমাধান হবে না। যে যে অবস্থায় আছি সে অবস্থায় তাদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। আশাকরি শিক্ষকদের এ দাবিটুকু সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ঠিক করতে না পারলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সবাইকে আন্তরিক ও সজাগ হতে হবে। তিনি উপস্থিত হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষকদের আশ্বস্ত করে বলেন আপনাদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। সব দাবি পর্যায়ক্রমে পূরণ হবে। আপনারা শুধু জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ইনশাআল্লাহ সব দাবি দাওয়া পূরণ হবে। জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রাণপুরুষ এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ নেতৃবৃন্দের আশার খবরে উত্তরের জেলা শহরে নওগাঁর মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে ছিল অন্যরকম উৎসব। কুয়াশার চাদর মোড়ানো তীব্র শীত উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মেহমানদের বক্তব্যে তাদের প্রত্যাশা পূরণের কথা শুনে ছিলেন উজ্জীবিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।