Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেগুনে ক্যান্সার ঝুঁকি, দাবি বাকৃবি গবেষকদের !

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২২, ৬:২৯ পিএম

বাঙ্গালীর বারোমাসি জনপ্রিয় সবজি বেগুন। কিন্তু উচ্চমান পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এই বেগুনে মানব দেহের ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সারের ঝুকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি রসায়ন বিভাগের বিজ্ঞানীরা।

তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই উল্লেখ করে গবেষনা টিমের প্রধান ও বাকৃবি কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো: জাকির হোসেন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বেগুন খাওয়া যাবে না। এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। আমি নিজেও আজকে বাসায় বেগুনের তরকারি খেয়ে এসেছি। কিন্তু মানবদেহের ঝুকি কমানোর জন্য বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর গবেষনালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ওই গবেষনা টিমের প্রধান ও বাকৃবি কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো: জাকির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয়ের আনিকা বুশরা নামের এক শিক্ষার্থী তাঁর এম.এস গবেষনার জন্য জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার ২০টি স্পট থেকে ৬০টি মাটির নমুনা এবং ৮০টি বেগুন সংগ্রহ করে। এরপর মাটি ও বেগুনে ভারী ধাতুর উপস্থিতি সনাক্তকরণ এবং মানবদেহে এদের সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য গবেষণা শুরু করে ৭ সদস্যের একটি গবেষনা টিম।

এতে ভারী ধাতুর মাধ্যমে মাটির দূষণ, খাদ্য তালিকায় পুষ্টির দিক থেকে গুরুত্বর্পূণ অনুপুষ্টি উপাদান (মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট) গ্রহণ এবং বেগুন খাওয়ার ফলে বিষাক্ত ধাতু থেকে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির দিকে নজর দেওয়া হয়।
পরে ক্রোমিয়াম ব্যতীত ওই গবেষণায় কৃষকের ক্ষেত থেকে সংগৃহীত বেগুনে সীসা, নিকেল, তামা, ক্যাডমিয়াম, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ এবং জিঙ্কের উপস্থিতি সনাক্ত হয়।

একই সাথে ওই গবেষনা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৭৫% নমুনায় সীসা, ১০% নমুনায় নিকেল এবং ৪০% নমুনায় ক্যাডমিয়াম নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশী সনাক্ত হয়েছে। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র ও নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আছে সবার।

গবেষনা টিমের সদস্য প্রফেসর ড. কাজী ফরহাদ কাদির জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টঝঊচঅ-এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি মুল্যায়ন মডেলে বেগুনে সনাক্তকৃত ভারি ধাতু গুলোর মান ব্যবহার করে ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার ঝুঁকি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে- সব গুলো নমুনায় সীসা এবং নিকেল এবং ৪০% নমুনায় ক্যাডমিয়ামের মান মানব দেহের সহনীয় মাত্রার চেয়েও বেশী। একই সাথে বেগুন চাষ করা কৃষকের জমির মাটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে- বেগুনে পাওয়া ধাতুগুলির উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষ করে ক্যাডমিয়াম, সীসা, নিকেল এবং তামা মাটি থেকেই আসছে।

ফলে কৃষি বিজ্ঞানীরা মনে করছেন- দূষিত কীটনাশক, সার, সেচের পানির ব্যবহারের কারণেই কৃষি জমিতে এই ধরনের ক্ষতিকর ভারী ধাতুর দূষণের কারণ। তবে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরোও সুনির্দিষ্ট গবেষণার প্রয়োজন বলেও জানান সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।

তাদের মতে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পলিসি লেভেলে পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে খাদ্য শৃংখলে ক্ষতিকর ভারী ধাতুর অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব।

 



 

Show all comments
  • Md. Nurul Mostafa ৭ নভেম্বর, ২০২২, ৪:০৬ পিএম says : 0
    বেগুন নিয়ে অবহেলা না করে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে শিঘ্রই পৌঁছা দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ