বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর নির্বাচন নির্বাচন খেলা নয়, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। গঠন করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকারের অধীনে গঠন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। ভবিষ্যতে নির্বাচন হবে সেই সরকারের অধীনে। মির্জা ফখরুল গতকাল বুধবার বগুড়া জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান বিভাগীয় মহাসমাবেশগুলোকে ঘিরে সারাদেশে মানুুষ যেভাবে জেগে উঠেছে তাতেই ভয় পেয়েছে সরকার। ভীত প্রধাণমন্ত্রী বলছেন, হেফাজতের মত বিএনপিকেও সাইজ করা হবে। এর মাধ্যমে তিনি প্রমান করলেন হেফাজতের হত্যায় তিনি জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাগরে পেতেছি শয্যা শিশিরে ভয় কি ? তিনি বলেন, এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে রিজার্ভ গিলে খাওয়ার গল্প। খাদ্য শস্য আমদানির জন্য তাই আর ডলার পাওয়া যায়না। তিনি অভিযোগ করেন, সব ডলার পাচার হয়ে যায় কানাডার বেগম পল্লীতে। মির্জা ফখরুল বলেন, যারা বলেন বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের দল তারা এই কাউন্সিলে এসে দেখে যান, বিএনপিতে কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। কিন্তু শহীদ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ৯ বছর ধরে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে আন্দোলন করেছেন। এখন দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছি। তথন তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। অথচ তারেক রহমানের স্ত্রী রাজনীতির সাথেই জড়িত নন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন,আওয়ামী লীগের রাশির সাথেই যেন দুর্ভিক্ষ জড়িয়ে আছে। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ বমি পর্যন্ত চেটে খেয়েছে। অথচ ক্ষমতায় আসার ২-৩ মাসের মধ্যে শহীদ জিয়া সবকিছু স্বাভাবিক করে ফেলেছিলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ এ পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ সব নেতাই রিফিউজি সেজে ইন্ডিয়া গিয়েছিল। কিন্তু শহীদ জিয়া অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। সেকারণেই বিএনপির এত জনপ্রিয়তা। ৪ টি বিভাগের সমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মনে আতংক তৈরি হয়েছে। তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির কাউন্সিলে নতুন যারা নির্বাচিত হবেন, তাদেরকে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ করতে বিশেষ ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, হয়তো ট্রেন পাবেননা। বাস পাবেননা। প্রয়োজনে তিনদিন আগে গনমিছিল করে যাবেন।

দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও নির্বাচন ২০২২› কমিটির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুুষ্ঠিত এই কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। জেলা বিএনপি ও দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও নির্বাচন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক এ্যাড,সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং একই কমিটির সদস্য মীর শাহে আলম ও তৌহিদুল আলম মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বগুড়া -৬ সংসদীয় আসনের এমপি জি এম সিরাজ, বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন এমপি, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহসানুল তৈয়ব জাকির, বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ রুবেল, মহিলাদলের সভানেত্রী লাভলী রহমান, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক হিরু,সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাধারণ সম্পাদক নাজমা রহমান, শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ,যুবদলের আহ্বয়ক খাদেমুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যানসহ বগুড়া জেলা বিএনপির বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘ এক যুগ পরে অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিল অধিবেশন ও নির্বাচন লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান।
সকাল ৯টায় এই কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় নেতারা অধিবেশন স্থলে এসে পৌঁছেন। কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হলে দ্বিতীয় পর্বে ২ হাজার ২২২ কাউন্সিলর দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।