Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খামারিদের শেষ সম্বল গবাদিপশু ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা

রূপগঞ্জে চোর-ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। তাতে বাণিজ্যিকভাবে গবাদিপশু পালনকারীদের পাশাপাশি নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সাধারণ দরিদ্র গবাদিপশু পালনকারীরা। তাদের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকায় কেনা গরু আবার কারো শখের সোনার হার বিক্রি করে কেনা গরুগুলো রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে অজ্ঞাত চোরের দল। এতে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয় খামারিরা। ভূক্তভোগী খামারিরা জানান, দিনমজুর শ্রেণীর লোকজনের বাড়তি আয়ের আশায় বাড়ির আঙ্গিনায় ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশু খামার। ছোট পরিসরে গড়া এসব খামারে ২টি থেকে শুরু করে ১২টি গরু একসাথে পালন করে মাংস ও দুধের চাহিদা মেটানোর কাজ করে আসছে একটু সচ্ছলতা পাওয়ার আশায়। নিজ পরিবারের পাশাপাশি দেশের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করে আসলেও চোরের উপদ্রব ও ডাকাত দলের হানায় চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন তারা। স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদের উপর ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র খামারিদের গবাদিপশু চুরির ঘটনায় অনুৎসাহিত হয়ে চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু সচ্চলতা ফিরে পাওয়ার আশায় বাড়ির গৃহবধূর সৌখিন সোনার হার, কানের দুল ও নাকের ফুল বিক্রি করে কেনা গরুগুলো রাতের আঁধারে চুরি ও ডাকাতির কবলে পড়ায় তাদের দুঃখের শেষ নেই। সহায়-সম্বলহীন হয়ে কেউ কেউ বাড়ি-ভিটে বিক্রি করে ঋণের বোঝা মুক্ত হচ্ছেন। এমনই অসহায়ত্ব দেখা গেছে, রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর এলাকার আশপাশের গ্রামগুলোতে। নিয়মিত পাহারা দিয়েও পাচ্ছেনা না স্বস্তি। অন্যদিকে থানা প্রশাসনের তেমন সহযোগিতা না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এই এলাকার খামারিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের টহল ও নজরদারি না থাকায় তাদের এ আতঙ্ক কাটানোর কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বাচল উপশহর ৩নং সেক্টর এলাকায় গুতিয়াব গ্রামের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে রাতের বেলায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন তাদের গড়া খামার রক্ষায়। খামারের নিরাপত্তায় রাত জেগে পাহারা দেয়ায় দিনের বেলায় কাজ করতে পারছেন না তারা। এতে তাদের ভিন্ন কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের পাহারা ব্যবস্থাকে থানা কর্তৃপক্ষ সম্মতি না দেয়ায় তাদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। গুতিয়াব এলাকার খামারি আমান উল্ল্যা আমান জানান, তার ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার পুঁজি দিয়ে কেনা ৩টি উন্নতজাতের গাভীই গত সপ্তাহে অজ্ঞাত চোর রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হওয়ার পরও থানা প্রশাসনের কোনো সহায়তা পাইনি। চোরদের শনাক্ত না করতে পারায় কেবল জিডি করেই আইনি ঝামেলা শেষ করতে হয়েছে। তাই নিজ উদ্যোগে গ্রামের লোকজন বাধ্য হয়ে পাহারা বসিয়েছেন। এতেও স্বস্তিতে নেই খামারিরা। এসব পাহারাদারদের মধ্যেই কেউ কেউ চোর ও ডাকাত দলের সাথে আঁতাত করে থাকেন বলে সন্দেহ তার। ফলে সুযোগ বুঝে ডাকাতি ও চুরি অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গুতিয়াব এলাকার গাফ্ফার মিয়ার ৫টি গাভী, পিংলানের আবুল হোসেনে র৩টি, রফিকুল ইসলামের ২টি, ইব্রাহিম মিয়ার একটি গাভী, কাজল মিয়ার ২টি খাসি, চান মিয়ার ৬টি গাভী, হাশেম মিয়ার ৩টি, আলম পুরার ছফুর মিয়ার ২টি, হানজত আলীর ৩টি, আবুল হোসেনের ৪টি, মধুখালীর আব্দুল জব্বারের ২টি, নামাপাড়ার মিজান মিয়ার ৫টি গরুসহ ৩০টি পরিবারের শতাধিক গরু বিগত ৫ মাসে চুরি হয়ে যায়। এসব চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। থানা প্রশাসনের কাছেও নেই কোনো তথ্য। এসব বিষয়ে থানায় মামলাও হয় না। খোয়া যাওয়া খামারিরা চোরের পরিচয় না জানতে পারায় কেবল জিডি করেই শেষ হয় আইনি সহায়তা। একই এলাকার দেলোয়ার মিয়া জানান, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা একটি সংঘবদ্ধ চোর ও ডাকাত দলের সাথে গোপন আঁতাত করে চুরি সংঘটিত করায় বলে ধারণা করেন তিনি। অপরদিকে আইনের লোক পরিচয় দিয়ে দরজা খোলার কথা বলে প্রতারণা করে এসব কুকর্ম করে চোরের দল। বাড়ির মালিককে অস্ত্রের মুখে পরবর্তীতে খুনের হুমকি দেয়ায় খামারিরাও জীবননাশের ভয়ে মুখ খুলেন না। একই এলাকার আবুল হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে দরজায় দাঁড়িয়ে অজ্ঞাত কণ্ঠে নিজেকে আইনের লোক পরিচয় দেয়। এ সময় দরজা খুলতে বলে। না খুলতে চাইলে সম্প্রতি খুন হওয়া স্থানীয় আমাল হোসেন হত্যামামলায় জড়ানো হবে বলে হুমকি দেয়। এ সময় বাধ্য হয়ে দরজা খুললেই অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জন ডাকাত দল গলায় ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে খামার ঘরের চাবি নিয়ে যায়। পরে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হাত পা-বেঁধে ফেলে। মুখে শব্দ ঠেকাতে মুখের ভেতর ছুরি প্রবেশ করিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিজের গরু নিজেই গাড়িতে তুলে দিতে বাধ্য হই। এ ঘটনায় আমার প্রতিবেশী ই¯্রাফিল মিয়া টের পেয়ে আশপাশের লোকজনকে গোপনে খবর দিলে মসজিদের মাইকে ডাকাত উপস্থিতির ঘোষণা দেয়। পরে ডাকাত দল ৫টি গরু থেকে কেবল একটি গরু নিয়ে পিকআপ ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে কারো নাম বলতে না পারায় কেবল সাধারণ ডায়েরি করেন আবুল হোসেন। স্থানীয় মনির মাহমুদ বলেন, পূর্বাচলের উপশহর এলাকার সুপ্রশস্ত রাস্তা-ঘাটের দরুন আন্তঃডাকাত দলের সদস্যরা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক নিয়ে এসে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে গরিব গবাদি খামারির শেষ সম্বল ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ৩শ’ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি দিয়ে দুর্বৃত্তরা সহজে গ্রামে প্রবেশ করে। এতে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। স্থানীয় দলিল লিখক রাসেল মাহমুদ বলেন, গুতিয়াব এলাকার দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বলটুকু দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিলেও থানা প্রশাসনের কোনো টহল না থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অতিসত্বর চোর ও ডাকাতের কবল থেকে স্থানীয়দের রক্ষার দাবি জানান তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম বলেন, চুরি- ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই এলাকার গবাদিপশু খামারিরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ