বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চলতি বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে নদীতে। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। গত বছরের চেয়ে দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে এবার। বিভিন্ন নদ-নদীতে তিনটি ধাপে চালানো গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। এদিকে জেলে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী জাটকা অভয়াশ্রম কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে আগামীতে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হবে দেশে।
ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, আশ্বিনের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। প্রজননের প্রধান এই সময়টাতে পরিভ্রমণ স্বভাবের ইলিশ মাছ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে। ইলিশের ডিমের পরিপক্কতা ও প্রাপ্যতা এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের ৬টি অঞ্চলের নদ-নদীতে অভয়াশ্রম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অনুকূল পরিবেশ ও অভয়াশ্রমে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে এবছর রেকর্ড ৫২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। গত বছর যা ছিল ৫১.৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও আবু কাউসার দিদার জানান, কিছু অসাধু জেলে কর্তৃক ইলিশ নিধন হলেও অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা নিষেধাজ্ঞার আগের ৭ দিন, নিষিদ্ধকালীন ২২ দিন এবং এর পরবর্তী সাতদিন বিভিন্ন নদী-নদীতে গবেষণা চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের লার্ভি ও জাটকা পেয়েছি। তাছাড়া আমাদের জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম দেখতে পাইনি। পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশের খাদ্য উপাদান রয়েছে। আশাকরি আগামীতে জাটকাকে সুরক্ষা দিতে পারলে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদনে সকল রেকর্ড ছাড়াবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে সুরুজ আলী বলেন, ‘এইবার মা ইলিশের অভিযানে অনেক জাউল্লা প্রশাসনের লোকদের টেহা পইসা খাওয়ায়া চুরি কইরা ইলিশ ধরছে। তারপরেও অনেক ইলিশ ডিম দিতে পারবে। তয় আগামীতে যদি জাটকা অভিযান ভালো কইরা দেয়, হেলে প্রচুর ইলিশ অইবো গাঙ্গে। আমরাও মাছ ধইরা দুই টেহা আয় করতে পারমু। আমগো দাবি, কোন অবস্থায় যেন জাটকা শিকার করতে না পারে কেউ।’
ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, সঠিক সময়ে অভয়াশ্রম পালিত হওয়ার পাশাপাশি ঝড়, বৃষ্টিপাত এবং নদীতে প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এবছর রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। এবছর মা ইলিশ ৮ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ ১৫ কেজি ডিম ছেড়েছে। এই ডিমের যদি ৫০ ভাগ ফুটে এবং ১০ ভাগ টিকানো গেলে আগামী মৌসুমে নতুন করে অন্তত ৪০ হাজার ২শ’ ৭৬ কোটি জাটকা ইলিশে পরিণত হবে। তবে সারা বছরই কম বেশি ডিম ছাড়ায় কিছু ইলিশের পেটে এখনো ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নদীতে ছাড়া মা ইলিশের ডিম ফুটে ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে তা জাটকায় পরিণত হবে। এই সময়টাতে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। মার্চ-এপ্রিল জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক হবে বলে আশাকরি। এর জন্য জেলেদেরকে নদী থেকে জাটকা ধরা থেকে বিরত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ শতাংশ, ২০২০ সালে ৫১.২ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৫১.৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছর ডিম ছেড়েছে ৫২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩.৮৮ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩.৯৫ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪.৯৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫.১৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.৩৩ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫.৫ লাখ মেট্রিক টন এবং গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫.৬৫ লাখ মেট্রিক টন।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, অভয়াশ্রমের সময়টাতে চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে মোট ৩শ’ ৮৯টি অভিযানে ৬শ’ ১৫ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এসময় ৪৪ লাখ ৮৬ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও আড়াই টনের অধিক ইলিশ জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এবছর অভিযান সফল হওয়ায় রেকর্ড সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে নদীতে। আগামীতে জাটকা সংরক্ষণে কার্যকর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে জেলেদের প্রতি আহ্বান থাকবে জাটকা না ধরার জন্য। এতে করে তারা বড় বড় সাইজের ইলিশ ধরে বেশি পরিমাণে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।