Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোশাক খাতে কালো মেঘ

গত দু’মাস ধরে ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং খুচরা বাজারে প্রভাবের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাক খাতেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছিল। এই ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি অক্টোবরে আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের আগষ্ট থেকে চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত পোশাক শিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ছিল। যে কারনে গত অর্থবছরে এ শিল্পখাত থেকে রফতানি হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থবছরের প্রথম দুইমাসে (জুলাই-আগষ্ট) প্রবৃদ্ধি ভালো ছিলো। কিন্তু গত দু’মাসে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে নীটওয়্যারে কমেছে ৯ শতাংশ এবং ওভেনে কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি আরো কমবে। নভেম্বরে এটি আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে। এর পেছনে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং খুচরা বাজারে প্রভাবকে দায়ী করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা দেখতে পারছি যে, বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি সঙ্কট চলছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটের প্রস্তাব আমানের পোশাক শিল্পেও পড়ছে। এতে করে শিল্পে বায় বাড়ছে দু’ভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটরগুলো চালানো হচ্ছে। অন্যভাবে, অধিক সময় জেনারেটর চালানোর কারণে জেনারেটরগুলো ঘনঘন বিকল হচ্ছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক। সেইসাথে আমাদের আরেকটি অনুরোধ, আমাদের উৎসে কর যা এ বছরে ১ শতাংশ করা হয়েছে, সেটি পূর্ববর্তী বছরের ন্যয় একই পর্যায়ে রাখা হোক। দেশে ডলারের রিজার্ভ কম এজন্য ডিজেল আমদানি করা যাচ্ছে না। কিন্তু রফতানিমুখী খাতগুলো যদি ঠিকমতো উৎপাদন করতে না পারে তাহলে রিজার্ভ আরো কমবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, দাম কমিয়েও তৈরি পোশাকের ক্রেতা পাচ্ছেন না শিল্প মালিকরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ব মন্দার কারণে এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ইউরোপের বড় বড় ক্রেতারা পোশাক নিতে চাচ্ছে না।
এদিকে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কর্মসূচি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে না নিতে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তবে ক্রেতাদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও গ্রিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারলে রফতানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বাড়াতে হবে। আমরা যদি ক্রেতাদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও গ্রিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারি, শিল্পকে টেকসই করতে পারি, তাহলে আমাদের রফতানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। শিল্পটিতে প্রত্যক্ষভাবে আরও এক কোটির বেশি এবং পরোক্ষভাবে আরও ৪০-৫০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। ইনোভেশন সেন্টার এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের জন্য একটি পথনকশা তৈরি করবে।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আগামী ১২-১৬ নভেম্বর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএফ) ‘ট্রান্সফরমেশন ফ্যাশন টুগেদার’ প্রতিপাদ্যে ঢাকায় র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ৩৭তম আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কনভেনশনে আসা প্রতিনিধিদল কারখানা ও আমাদের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। এ সম্মেলন ৪০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পোশাকশিল্প সমিতি, নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ আইএএফের সদস্যদের একত্র করবে।
তাছাড়া বিজিএমইএর উদ্যোগে আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ চলছে। মেইড ইন বাংলাদেশ উইকের অংশ হিসেবে ঢাকা অ্যাপারেল সামিট হচ্ছে এবং এই সামিট উপলক্ষে ৯টি সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। মেইড ইন বাংলাদেশ উইক, ইভেন্টের আওতায় চারটি প্রতিযোগিতাভিত্তিক অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম আয়োজন রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ