বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুক্ষনের মধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করছেন। দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বিপুল সম্ভবনার পায়রা বন্দর আগামীতে ব্যপক ভ’মিকা রাখবে বলে অর্থনীতিবীদগন আশা করছেন। গনভবন থেকে সকাল ১০টার পরে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালী পায়রা বন্দর এলাকার এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। এ উপলক্ষে পায়রা বন্দরে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সচিব সহ মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগন এবং বরিশালে বিভাগীয় কমিশনার ছাড়াও বন্দরের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ‘রাবনাবাদ চ্যনেল’এর চারিপাড়া এলাকায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় ১৬ একর জমি অধিগ্রহন করে চট্টগ্রাম বন্দরের তত্বাবধানে দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ঐ বছরই ৫ আগষ্ট মন্ত্রীসভা ‘পায়রা বন্দর কতৃপক্ষ অর্ডিন্যনন্স-২০১৩’এর অনুমোদনের পরে একই বছরের ৫ নভেম্বর এসংক্রান্ত বিল জাতীয় সংসদে পাশের ফলে পরবর্তিতে এ বন্দর কতৃপক্ষ গঠিত হয়।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের সঠিক কৌশলগন পরিকল্পনা ও পরিপূর্ণ মাষ্টার প্লান প্রনয়নের লক্ষে নেদারল্যান্ডের রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি এবং বুয়েটের গবেষনা, পরিক্ষা ও পরামর্শক ব্যুরো-বিআরটিসি’কে ২০১৯ সালে পরার্মশক নিয়োগ করা হয়েছে । সে আলোকে ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের পরিপূর্ণ নকশা প্রনয়ন সহ সার্বিক কর্ম পরিকল্পনা প্রনয়ন করছে।
পায়রা বন্দরের উন্নয়ন সহ সুষ্ঠু পরিচালন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বন্দরের জেটি এলাকা থেকে সাগরের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০.৫ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১২৫ মিটার প্রসস্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। ৪০ হাজার টন পণ্য ও ৩ হাজার কন্টেইনারবাহী নৌযান বন্দরের চবলাচলে লক্ষে এ ড্রেজিং প্রকল্পে ব্যায় হচ্ছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বেলজিয়ামের ‘জান ডি নুল’ এ ড্রেজিং সম্পন্ন করছে।
একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরের জন্য ২১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত দুটি পাইলট ভ্যাসেল, ২টি হেভি ডিউটি স্পীড বোট, দুটি টাগ বোট, ১টি বয়া লেয়িং ভেসেল ছাড়াও ১টি সার্ভে ভেসেল-এর উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়নস্ত্রনাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ছাড়াও দুটি বেসরকারী নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠান দেশেই এসব বিশেষায়িত নৌযানগুলো নির্মান করায় বিপুল বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় হয়েছে।
অপর এক প্রকল্পের আওতায় পায়রা বন্দরের জন্য প্রথম টার্মিনাল, ৬.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬লেন সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদের ওপর ১ হাজার ১৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মানে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পের আওতায় বন্দরের প্রথম টার্মিনালের আওতায় ৩টি জেটি নির্মিত হলে একই সাথে ২শ মিটার দীর্ঘ ৪০ হাজার টন বহন ক্ষমতার ৩টি কন্টেইনার বা বাল্কবাহী কার্গো জাহাজ ভিড়তে পারবে। এ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি জেটি নির্মানে প্রায় ৯১৭ কোটি টাকা সহ ইয়ার্ড নির্মানে আরো ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যায় হবে। নির্মিতব্য ইয়ার্ডে হাই কেন্টইনার স্থাপনের সংস্থান ছাড়াও রাবার টায়ার্ড গ্যন্ট্রি ক্রেন ব্যাবহার করে কন্টেইনার স্টেকিং এবং লোড-আনলোড সম্ভব হবে। এসব ইয়ার্ডে ২০ ফুট দৈর্ঘের বছরে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে বলে পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান জানিয়ছেন।
একই প্রকল্পের আওতায় পায়রা বন্দর থেকে ৬.৩৫ কিলোমিটার ১টি সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। নৌ পরিবহনে মন্ত্রনালয়ের অর্থে সড়ক ও জনপথ আধিদপ্তর ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে। স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। বন্দরের পণ্য পরিবহনের লক্ষে প্রায় ৭৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে আন্ধারমানিক নদের ওপর ১ হাজার ১৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতুও নির্মান করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। নির্মান প্রতিষ্ঠান বাছাই ও চুক্তি সম্পাদন থেকে ৩০ মাসের মধ্যে এ সেতুটি নির্মিত হবার কথা রয়েছে।
এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পায়রার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক বানিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল মহল। গত কয়েক বছরে পায়রা বন্দরে ২৩৬টি পণ্যবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙর ও পণ্য খালাশ করায় বন্দরের আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে বৈদেশিক বানিজ্য পর্যায়ক্রমে বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোঃ সোহায়েল-এনইউপি, পিপিএম, পিএসসিÑবিএন ।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। এখনো দেশের আমদানীÑরফ্তানীর ৯৫% সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। যার ৯২%ই হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে। ফলে চট্টগ্রাম এ উপমহদেশের একটি অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দরে পরিনত হয়েছে। দেশের ৭১০কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপক’লীয় এলাকায় অসংখ্য চ্যনেল রয়েছে। কিন্তু এসব চ্যানেলকে আজ পর্যন্ত তেমন কোন উন্নয়নমুখি কাজে ব্যাবহার করা যায়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ভবিষ্যতের বর্ধিত চাপ অন্য বন্দরে ভাগ করা সহ দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসমাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নে দেশে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ছিল দীর্ঘ দিনের।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী সহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সমুদ্র উপক’লবর্তী যেকোন একটি এলাকায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ করে প্রস্তাবিত এ সমুদ্র বন্দরের জন্য ‘পরিবেশগত প্রভাব সমিক্ষা’ সহ ‘অর্থনৈতিক ও কারিগরি সমিক্ষা’ সম্পন্ন করে। দেশীয় আধা সরকারী নদী বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং-আইব্লিউএম’ এসব সমিক্ষা সম্পন্ন করে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ চ্যানেলে ৩য় সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সুপারিশ করে।
চ্যানেলটির যে স্থানে বন্দরটি স্থাপন করা হচ্ছে সেখান থেকে সাগর মোহনার দুরত্ব প্রায় ৩৫কিলোমিটার। নুন্যতম এক কিলোমিটার প্রসস্ত এ চ্যানেলটির অভ্যন্তরভাগে ২৫Ñ৩০ফুট নাব্যতা বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি মূল বন্দরের চারিপারা এলাকায় বর্তমান নুন্যতম গভীরতা প্রায় ২৫ মিটার। চ্যানেলটির শ্রোতের প্রবাহ ঘন্টায় ৩-৪ নটিক্যাল মাইল হওয়ায় ক্যাপিট্যল ড্রেজিং-এর মাধ্যমে এর নাব্যতা কাঙ্খিত মাত্রায় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। যা দেশের অন্য দুটি সমুদ্র বন্দরের চেয়েও কিছুটা বেশী। ফলে এ চ্যানেলটির নাব্যতা নিয়ে ভবিষ্যতে কোন সমষ্যা সৃষ্টির আশংকা নেই বলেও মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞগন ।
রাজধানী ঢাকা থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দরের দুরত্ব ৩৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩১৬ কিলোমিটার এবং বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১৭২কিলোমিটার। এ সমুদ্র বন্দরের সাথে সারা দেশের পণ্যবাহী নৌযানের চলাচল নির্বিঘœ রাখতে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব আঞ্চলিক নৌপথই প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। এসব নদ-নদীতে নির্মিত সেতুগুলোও ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মান করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।