ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে রোববার শেষ রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর ৯০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত হবার ২৪ ঘণ্টা পরেও বেশীরভাগ এলাকা পানির তলায়। চরম দুর্ভোগে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসী। এমনকি অনেক পরিবারেই মানবিক বিপর্যয় পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে। বস্তিবাসীদের দূর্ভোগ সব বর্ণনার বাইরে চলে গেছে। রোববার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ হোটেল সহ কিছুটা নিরাপদ আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন। নগরীর নবগ্রাম রোডের করিম কুটির এলাকা থেকে একটি পরিবার সাড়ে ১২শ টাকা দিয়ে গাড়ী ভাড়া করে সদর রোডের আকেটি আবাসিক হোটেলে পৌছে সেখানে রাত্রীযাপন করেন।
নগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনের পয়ঃনিস্কাশন ব্যাবস্থা অনেক আগে থেকেই ভঙ্গুর। এর সাথে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সামান্য বেশী বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানির তলায় চলে যাচ্ছে। সেখানে সিত্রাং-এ ভর করে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত গোটা নগরীকে আরেক দফা ডুবিয়ে দিলেও দূর্যোগ কেটে যাবার ১২ ঘন্টা পরেও গোটা নগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে। সোমবার দুপুরের পরেও অনেকের ঘরে চুলা জ¦লেনি। ঘরের শৌচাগারগুলো পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারছেন না বেশীরভাগ পরিবার।
নগরভবন থেকে অবশ্য রোববার দিনভরই চেষ্টা করা হয়েছে পঃয় নিস্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে। সোমবার সকাল থেকেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ করলেও দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভ’ত জঞ্জাল সরিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবে পানি কিছুটা সড়তে শুরু করলেও এ নগরী সম্পূর্ণ প্লাবন মূক্ত হতে আরো অন্তত দু দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
এ নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নগরভবন থেকে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। তবে নগরীর ২৪টি খাল খননে প্রায় ২২শ কোটি টাকার উচ্চভিলাসী একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে পেস করা হলেও এখনো তাতে সবুজ সংকেত মেলেনি। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীতে তাদের ১০টি খাল খনন সহ সৌন্দর্য বর্ধনে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র গ্রহন ও মূল্যায়ন শেষ করলেও নগর ভবনের আপত্তির কারেণে ঠিাকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের জনবলের কিছুটা ঘাটতির পাশাপাশি কর্মরতদের কাজের প্রতি আন্তরিকতার ঘাটতিরও অভিযোগ রয়েছে। অনেক পরিচ্ছন্ন কর্মী নগর ভবনের দিক নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরন করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিবেচনায় চাকুরী পাওয়া এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীর অনেকই ওয়ার্ডের সুপারভাইজারদের নির্দেশনা পালনেও অনিহা প্রকাশ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর সরকারী হাতেম আলী কলেজের লেকটির পয়ঃনিস্কাশনে নবগ্রাম রোড ও রাজকুমার ঘোষ রোডের সংযোগ স্থলে মাত্র ৬৫ ফুট দৈর্ঘ ড্রেনটি নিয়মিত পরিস্কার না করায় লেকের পানি সরছে না। রোববার সিত্রাং-এর বয়ে আনা প্রবল বর্ষণে লেকটির পানি উপচে আসেপাশের বাড়ি ঘরকে প্লাবিত করে। অথচ বিষয়টি রোববার দুপুরেই নগরভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে অবহিত করেন স্থানীয় বাসিন্দাগন। কিন্তু সোমবার দুপুরের আগে ঐ ড্রেনের বর্জ্য অপসারন করে লেকের পানি অপসারন শুরু হয়নি। ফলে কলেজের লেকের পানি অসারনে আরো অন্তত দুদিন সময় লাগবে।
এভাবেই নগর ভবনের কতিপয় কর্মীর উদাশীনতা, অবহেলা আর নগরবাসীর প্রতি প্রজাসুলভ আচরনে অন্য অনেক কিছুর মত এ নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাও জনকল্যানে আসছে না বলেও অভিযোগ সাধারন মানুষের।
এ নগরীর সুসশীল সমাজ, সচেতন নাগরিক সমাজ সহ নাগরিক অধিকার সংরক্ষনে কাজ করা সংগঠন নেতৃবন্দ নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা বলছেন। তবে তারা তাদের হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ্যে বলতেও চাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তেই এসব নেতৃবৃন্দ মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা সহ নাগরিক সুবিধা সমুহ অবিলম্বে নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন।